নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার মানুষ

ফানাম নিউজ
  ১৭ নভেম্বর ২০২১, ২৩:৫০

শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ফলে খাবারসহ অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় অন্যদের মতোই বেশ বিপাকে পড়েছেন চন্দনা সিলভা এবং তার পরিবারের সদস্যরা। রাজধানী কলম্বোর একটি হোটেলে ওয়েটার হিসেবে কাজ করেন ৪৫ বছর বয়সী এই দুই সন্তানের জনক।

তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনা মহামারির আগে তার আয় বেশি ছিল। মহামারিতে আয় কমে গেছে, অপরদিকে জিনিপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। দুধ, চিনি, রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আকাশচুম্বী। ফলে এই দ্বীপ রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটানোও সম্ভব হচ্ছে না।

কলম্বোর একটি শহরতলিতে বাস করেন সিলভা। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, তাদের খরচের ধরন এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। সকালবেলা তারা দুধে পানি মিশিয়ে তাতে চিনি মিশিয়ে খান। আর সন্ধ্যায় তারা দুধ ছাড়া চিনি দিয়ে রং চান খান। খাদ্যের দাম বাড়ার আগে এই পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন।

সিলভা চেষ্টা করেন অফিসেই খাবার খেতে যেন বাড়িতে তার স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা পরিমিত খাবার পান। কিন্তু তারপরেও তারা দিনে একবেলাও ভালো ভাবে খাবার খেতে পারেন না।

করোনা মহামারির কারণে বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও বিধিনিষেধ জারির কারণে বিশ্বজুড়েই খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসিক ফুড প্রাইস ইনডেক্সের (এফএফপিআই) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত টানা তৃতীয়বারের মতো খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চিনি, গুড়া দুধসহ বিভিন্ন অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আমদানি করে থাকে শ্রীলঙ্কা। বেশিরভাগ পরিবারই জানিয়েছে যে, তারা করোনা মহামারির আগে খাবারের পেছনে যে টাকা খরচ করতেন এখনও তাই করছেন। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তাদের বেশি টাকায় অল্প জিনিস ক্রয় করতে হচ্ছে। অনেককেই আবার কোনো কোনো বেলায় না খেয়েই থাকতে হচ্ছে।

একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোহাম্মদ ফালেল নামে ৫১ বছর বয়সী এক নিরাপত্তা রক্ষী জানিয়েছেন, খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশ বিপাকে পড়েছেন তিনি। দিনের বেলায় অফিস করে রাতে আবার তাকে অটো বিক্সা নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়। এতে তার পকেটে অতিরিক্ত কিছু টাকা জমা হয়, যদিও তাতেও খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি।

শ্রীলঙ্কায় এক কেজি মাছের দাম ৮শ থেকে ১২শ শ্রীলঙ্কান রুপি বা চার থেকে ছয় ডলার। গত এক বছরে মুরগীর দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এখন একটি মুরগীর দাম ৪শ থেকে ৮শ শ্রীলঙ্কান রুপি বা ২ থেকে ৪ ডলার। দেশটিতে গুড়া দুধ এবং রান্নার গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

এফএও বলছে, বিশ্বব্যাপী সব ধরনের খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। গত মাসের চেয়ে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্ববাজারে প্রধান রপ্তানিকারকদের ওপর এক ধরনের চাপ রয়েছে। বিশেষ করে কানাডা, রাশিয়ান ফেডারেশন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফসল হ্রাসের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কানাডা, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশগুলোয় গমের ফলন তুলনামূলকভাবে কমছে। ফলে তারা রপ্তানিতে লাগাম টেনেছে।

এফএও-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড পরিমাণে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সংকটের কারণে বেড়েছে পাম তেলের দামও। অক্টোবরে বিশ্ববাজারে চিনির দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ।