শিরোনাম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সবচেয়ে বর্ণময় চরিত্রদের মধ্যে অন্যতম সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সত্তরের দশকে যাদের হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র রাজনীতি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তাদেরই একজন সুব্রত। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
১৯৪৬ সালের ১৪ জুন বজবজ এলাকার সারেঙ্গাবাদে জন্ম সুব্রতর। মফস্বলের ছেলে সুব্রত কলকাতায় আসেন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর। এসময় কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতি করতে গিয়ে প্রিয়রঞ্জন দাশ মুন্সির সঙ্গে সখ্য হয় তার। সেই সূত্রে সুব্রত হয়ে উঠেন ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয়পাত্র।
১৯৭১ সালে ২৬ বছর বয়সে বালিগঞ্জ থেকে প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েই জয়। ওই সময়েই কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের সভাপতিও হয়েছিলেন সুব্রত। ১৯৭২ সালে ফের বালিগঞ্জ থেকে জিতে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য হন সুব্রত। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হওয়ার সেই রেকর্ড এখনও তার দখলেই।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭৭ সালের ভোটে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের সময় সুব্রতও হেরে যান। ১৯৮২ সালের বিধানসভা ভোটে আসন বদল করে চলে যান উত্তর কলকাতার জোড়াবাগানে। সেখান থেকে পরপর তিনবার জেতেন। ১৯৯৬ সালে ভোটে দাঁড়ান চৌরঙ্গি থেকে। জয়লাভ করেন সেখানেও। ২০০০ সালে কংগ্রেস ছেড়ে সুব্রত যোগ দেন তৃণমূলে। ওই বছর কলকাতার পুরভোটের সময় কংগ্রেসের বিধায়ক পদ ধরে রেখেই ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রতীকে ভোটে দাঁড়ান। জেতেন এবং কলকাতার মেয়র হন।
২০০১ সালে কলকাতার মেয়র পদে থেকেই চৌরঙ্গি থেকে তৃণমূলের বিধায়ক হন সুব্রত। ২০০৪ সালে বাম প্রার্থী সুধাংশু শীলের কাছে হেরে যান সুব্রত। ২০০৫ সালে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বিরোধের জেরে তৃণমূল ছেড়ে পৃথক মঞ্চ গড়েন। এনসিপির ‘ঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়াই করেন পুরভোটে। সুব্রত নিজে জিতলেও ধরাশায়ী হয় তার মঞ্চ। পাঁচ বছর পর ফের কলকাতা পুরসভার দখল নেয় বামফ্রন্ট। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে ফিরে যান সুব্রত।
২০১০ সালের পুরভোটের সময় কংগ্রেস ছেড়ে ফের সুব্রত যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১১ সালে তৃণমূলের প্রতীকেই বালিগঞ্জের বিধায়ক হন। মমতার প্রথম মন্ত্রিসভায় জায়গাও হয় তার। ২০১৬ এবং ২০২১ সালে ওই কেন্দ্র থেকেই জিতে আমৃত্যু মন্ত্রিসভায় ছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় কলকাতার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুব্রত। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। তিনি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নসহ রাজ্যের চারটি দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা লেখেন, রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি।