শিরোনাম
ইরানের হাজার হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাস দখল দিবস উপললক্ষে তেহরান সড়কে জড়ো হয়েছে। আমেরিকা মৃত্যু, ইসরাইলের মৃত্যু এবং এই দেশ দুটির পতাকা পোড়ানোর মধ্য দিয়ে তারা এই দিবস উদযাপন করেছে।
১৯৭৯ সালের এই দিনে খোমেনী সমর্থক ইসলামী বিপ্লবীরা ইরানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস দখল করেন। ঘটনাটিকে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই মানবাধিকার বিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে নিন্দা জানিয়ে আসছে৷ তবে ইরান এটিকে তাদের বিপ্লবের অংশ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে৷ দিনটিকে প্রতি বছর ছাত্র দিবস হিসেবে পালন করে থাকে ইরান৷
ইরানের টেলিভিশনে দেখানো হয়, সেদিন দূতাবাসে জিম্মিদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া এবং মার্কিন পতাকা পোড়ানোর দৃশ্য। সেদিনের মার্কিন দূতাবাসকে এখন জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে যার নিয়ন্ত্রণ ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর হাতে। মার্কিন বিরোধী নানা প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়ে থাকে ওই জাদুঘরে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ইরানের ইসলামি রেভ্যুলশনারি গার্ড কর্পসের প্রধান (আইআরজিসি) হোসেইন সালামি দীর্ঘ বক্ততৃতায় বিগত কয়েক দশকে এই অঞ্চলে মার্কিন আগ্রাসনের নিন্দা জানান। ইরানের স্বার্থ যারা খর্ব করতে চায় দেশটির সন্তানরা বলিষ্ঠভাবে সেসব শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কী ঘটেছিল সেদিন
১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর। তেহরানসহ গোটা ইরান তখন আয়াতুল্লাহ খোমেনির সমর্থক ইসলামী বিপ্লবীদের দখলে ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি তখন ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশান্তর হন। ইরানের বিপ্লবীরা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফেরত চান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাতে সাড়া না দেওয়ায় সেদিন শত শত যুবক তেহরানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস ঘিরে ফেলে। তাদের যত ক্ষোভ তাদের ভাষায় ‘সবচেয়ে বড় শয়তান' আমেরিকার ওই দূতাবাসকে ঘিরে।
একপর্যায়ে ‘আমেরিকা নিপাত যাক' স্লোগান দিয়ে শত শত বিপ্লব সমর্থক যুবক ঢুকে পড়েন মার্কিন দূতাবাসে। এ সময় দূতাবাসে ছিলেন সব মিলিয়ে ৬৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। বিপ্লবীরা নারী এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের মুক্তি দিলেও বাকি ৫২ জনকে জিম্মি করে রাখে। ইরানের শাহকে ফেরত না দেওয়ার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এই জিম্মি নাটক ঘটায় ইরানের ইসলামী বিপ্লবীরা। গোটা বিশ্বই তখন হতবাক হয়ে পড়ে তাদের এই নাটকে।
সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জিমি কার্টার। জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য মুখের কথাতে কাজ না হওয়ায় পাঠান জঙ্গি বিমান। কিন্তু ইরানী গোলার আঘাতে দুটি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয় এবং প্রাণ হারায় আট মার্কিন সেনা।
এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের দা-কুমড়ো সম্পর্ক। ১৯৮১ সালের নির্বাচনে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন রোনাল্ড রেগান। মূলত ইরানীদের হাত থেকে জিম্মিদের উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে জিম্মিদের একে একে মুক্তি দিতে শুরু করে ইরান সরকার। ২০ জানুয়ারি সর্বশেষ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। জিম্মিরা ফেরেন তাদের স্বজনদের কাছে।