শিরোনাম
সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থানের পর সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির সার্বভৌম পরিষদের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান।
তবে জরুরি অবস্থা ভেঙে রাজধানী খার্তুমসহ বিভিন্ন শহরে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন দেশটির নাগরিকরা। এতে গুলি চালিয়েছে সেনাবাহিনী। সামরিক বাহিনীর গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮০ জন। খবর আল-জাজিরা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সুদানের সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদক ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান।
এদিকে, অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে সকাল থেকেই রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় নেমে আসে কয়েক হাজার মানুষ। তারা স্লোগান দিয়ে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানান। একই সময়ে নিকটবর্তী ওমদুরমান শহরেও বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। বিক্ষোভে অসংখ্য নারীও অংশ নেন।
এসময় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে সেনাবাহিনী। এতে অন্তত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আহত হয়েছেন আরও ৮০ জন বিক্ষোভকারী।
তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ সোমবার সুদানে অন্তত ১৪০ জন হতাহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে ঠিক কতজন মারা গেছেন, তা এখনো নিশ্চিত করে জানায়নি বিবিসি।
‘বিবিসি অ্যারবিক’-এর প্রতিবেদক মোহাম্মদ ওসমান খার্তুম থেকে জানিয়েছেন, একজন বিক্ষোভকারী তাকে জানিয়েছেন, ‘সেনা সদরদপ্তরের সামনে তিনি মানুষের ওপর সেনা সদস্যদের গুলি ছুড়তে দেখেছেন।’ আরেকজন বিক্ষোভকারী জানান, ‘তার পায়ে গুলি করেছে সেনারা।’
আল-তাইয়েব মোহাম্মদ আহমেদ নামে একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘দুজন মানুষ মারা গেছে। আমি তাদের নিজের চোখে দেখেছি।’
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, রাজধানী খার্তুমের বিভিন্ন হাসপাতালে জখম হয়ে চিকিৎসা নিতে ছুটে যাচ্ছেন মানুষ। তাদের অনেকের পোশাক রক্তে লাল হয়ে যেতে দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় সোমবার সকালে সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে গৃহবন্দি করা হয়। সামরিক বাহিনীর অজ্ঞাত সদস্যরা তার বাড়ি ঘেরাওয়ের পর তাকে গৃহবন্দি করে।
প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ও দেশটির ক্ষমতাসীন সার্বভৌম কাউন্সিলের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক কর্মকর্তাকে সামরিক বাহিনী গ্রেফতারের পরই প্রধানমন্ত্রী হামদককে গৃহবন্দি করা হয়েছিল।
আবদাল্লাহ হামদককে অভ্যুত্থানের সমর্থনে বিবৃতি দিতে চাপ দেন সামরিক বাহিনী। তবে তিনি বিবৃতিতে দিতে অস্বীকার করার পর সুদানের নিরাপত্তা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করেছে। পরে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয়।
পরে এক টেলিভিশন ভাষণে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেন, চলমান লড়াই দেশের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই এটি রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত সামরিক সরকার দায়িত্ব পালন করবে।
দেশটিতে ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। গত মাসেও দেশটিতে অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়। তবে অভ্যুত্থানের ওই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে সেসময় বলা হয়েছিল, একদল সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন। তখন তারা অভ্যুত্থান করতে ব্যর্থ হন।