শিরোনাম
দুই মাস আগেও কলকাতার নিউমার্কেট, মার্কুইজ স্ট্রিট এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকতো। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন, সহিংসতা, কারফিউ এবং শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর কলকাতায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় বাংলাদেশি পর্যটক। এর অন্যতম বড় কারণ হলো ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশে ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ চালু করেনি। আগে যারা ভিসা নিয়েছেন, তারাই শুধু ভারতে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন।
অধিকাংশ বাংলাদেশি পর্যটক মূলত কলকাতার নিউমার্কেট, মার্কুইস স্ট্রিট বা মুকুন্দপুর অঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই থাকেন, কেনাকাটা করেন। এসব এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে সারাবছর।
নিউমার্কেটের শপ অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক গুপ্তা বলেন, “মাসখানেকের বেশি সময় হয়ে গেল, বাংলাদেশ থেকে প্রায় কেউই আসছেন না। নিউমার্কেটের জামা-কাপড়ের দোকান বলুন বা অন্যান্য সামগ্রী- এসবের একটা বড় ক্রেতা বাংলাদেশের মানুষ। ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি, তাই কেউই আসতে পারছেন না। আমাদের বিক্রি প্রায় ৬০% কমে গেছে গত এক মাসে।”
তবে নিউমার্কেটের ব্যবসা কমে যাওয়ার আরও একটা কারণ আরজি কর মেডিকেল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “ওই ঘটনা মানুষকে এতটাই নাড়া দিয়েছে যে, অনেকেরই কেনাকাটা করার বা উৎসবে মাতার মতো অবস্থায় নেই। এছাড়া প্রতিদিনই মিছিল-প্রতিবাদ হচ্ছে। তাই মানুষ এখন এদিকে আসা কমিয়ে দিয়েছে।”
একই অবস্থা মার্কুইস স্ট্রিটেও। বাংলাদেশিরা কলকাতায় গেলে মূলত এই এলাকার হোটেলগুলোতেই থাকেন।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক মাস আগের তুলনায় কলকাতায় এখন বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
মার্কুইস স্ট্রিট বাংলাদেশিদের কাছে অতি পরিচিত একটি এলাকা। কলকাতার কেন্দ্রস্থলের এই এলাকায় অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট আছে, যারা মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভর করেই ব্যবসা করে থাকে। এছাড়াও এই অঞ্চলে মানি এক্সচেঞ্জ, বাসের কাউন্টারসহ বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রায় সব ধরনের পরিসেবাই পাওয়া যায়। ফলে এই এলাকায় গেলে কখনও মনেই হবে না যে, এটা ঢাকার বাইরে অন্য কোনো শহরের রাস্তা।
তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাই মাস থেকে কমে যায় বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা। আর অগাস্ট থেকে তা একরকম বন্ধই হয়ে গেছে। এ বিষয়ে মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল মালিকদের সংগঠনের নেতা মনোতোষ সরকার বলেন, “এখন শুধুমাত্র মেডিকেল ভিসা নিয়ে মানুষ আসতে পারছেন, অথবা আগে থেকে যাদের ভিসা নেওয়া ছিল, তারা আসছেন। কয়েক মাস আগেও আমাদের হোটেলগুলোর ৬০ থেকে ৮০% অকুপেন্সি রেট ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে মাত্র ৩০%।”
“রুম অকুপেন্সি রেট” হলো হোটেল ব্যবসার একটি শব্দ, যা হোটেলের মোট ঘরের সংখ্যার কত শতাংশে মানুষ থাকছেন, তার হিসাব। অর্থাৎ হোটেলগুলোতে ১০০টি ঘর থাকলে এখন মাত্র ৩০টি ঘরে পর্যটক থাকছেন।
মনোতোষ সরকার বলেন, “মার্কুইস স্ট্রিটে তো শুধু হোটেল নয়, বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আরও বহু পরিসেবার সংস্থা আছে। তাদেরও মূল ক্রেতা বাংলাদেশিরা। তারা এখন এতটাই কম আসছেন যে, সব ব্যবসায়ীরাই মার খাচ্ছেন। বাস আসছে বাংলাদেশি পর্যটক নিয়ে, কিন্তু সেখানেও ৩০% আসন ফাঁকা থাকছে।”
কতদিন এই অবস্থা চলবে, তা অনিশ্চিত। তাই অন্য কোনো অঞ্চলের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায় কি-না, সে ব্যাপারে ভাবছেন মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল ব্যবসায়ীরা।
এসএস হগ মার্কেট যা নিউমার্কেট বলে পরিচিত। এই এলাকা এবং তার আশপাশের বিপণী বিতানগুলোতে সারা বছরই বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। বেড়াতে এসে হোক অথবা চিকিৎসার জন্য, বেশিরভাগ বাংলাদেশি পর্যটকই কলকাতায় গেলে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করেন। বিশেষত পোশাকের দোকানগুলোতে বাংলাদেশি ক্রেতাদেরই ভিড় দেখা যেত।
এ বিষয়ে নিউমার্কেটের দোকান মালিকদের সংগঠনের প্রধান অশোক গুপ্তা বলেন, “কিন্তু এক মাস হয়ে গেল, তারা (বাংলাদেশি) এখন আর ভারতে আসছেন না প্রায় কেউই। আমাদের দোকানগুলোর ৬০% বিক্রি কমে গেছে এই এক মাসে। পোশাক, সাজগোজের জিনিস অথবা জুতাসহ সব ব্যবসায়ীই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “মাসখানেকের মধ্যেই দুর্গাপুজো। পুজো আর ঈদের আগে আমাদের ব্যবসার বড় সিজন। পুজোর সময়ে যে শুধু যে হিন্দুরা কেনাকাটা করেন, তা নয়। এই সময়ে অনেক নতুন ডিজাইনের পোশাক বাজারে আসে, তাই মুসলমান এবং অবশ্যই বাংলাদেশিরা এই সময়ে কেনাকাটা করতে আসতেন। আবার পাইকারি বাজার থেকে পোশাক কিনে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সে দেশ থেকে ব্যবসায়ীরাও আসতেন। তবে এ বছর কেউই প্রায় আসছেন না। বাংলাদেশের পরিস্থিতি তো একটা কারণ। আবার কলকাতায় এখন বহু মানুষ আরজি করের ঘটনা নিয়ে এতটাই মন খারাপ করে আছেন যে, তারাও কেনাকাটা করতে উৎসাহ পাচ্ছেন না।”
তার কথায়, “কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই আগামী পাঁচ-ছয় দিন সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে বাজারের পরিস্থিতি যদি কিছুটা উন্নতি হয়, তাহলে ভাল। না হলে এবারের কেনাকাটার মৌসুমটা পুরোই লস আমাদের।”
নিউমার্কেটের কাছাকাছি আরও যে কয়টি বড় শপিংমল বা বড় বড় দোকান আছে, সেখানেও একই পরিস্থিতি বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।