শিরোনাম
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। দেশটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন গ্রেফতার হলেন।
বারবার সমন পাঠিয়ে তাকে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করছে ইডি, এই অভিযোগ তুলে অন্তর্বর্তী সুবিধা পেতে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন কেজরিওয়াল। বৃহস্পতিবার সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। এরপর রাতেই সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে পৌঁছান ইডির কর্মকর্তারা।
এর আগেই বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় তার বাড়ির সামনে। কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী হলেও দিল্লির পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর দপ্তর।
এদিন রাত নয়টার দিকে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসায় পৌঁছান ইডি কর্মকর্তারা। রাত প্রায় ১১টায় কেজরিওয়ালকে নিয়ে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপরে দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ইডির সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার তাকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে।
যে অভিযোগে গ্রেফতার
দিল্লিতে মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়ার নীতি বদল করে কেজরিওয়াল এবং কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতা মদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুস নিয়েছেন, এই অভিযোগের তদন্ত করছে ইডি। সেই মামলাতেই কেজরিওয়ালের দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ও দিল্লির সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীষ শিশোদিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলে রয়েছেন।
দলের সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং ওই একই মামলায় গত বছরের অক্টোবর মাসে গ্রেফতার হয়েছেন। সম্প্রতি তেলেঙ্গানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে কে কভিতাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন মদ ব্যবসায়ী, নেতা, মন্ত্রী ও তাদের কয়েকজন সহায়কও জেলে রয়েছেন।
দিল্লির আবগারি নীতি সংক্রান্ত ওই মামলায় কেজরিওয়ালকে জেরা করার জন্য নয়বার সমন পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তবে তিনি কোনোবারই জেরার মুখোমুখি হননি। তবে আরেক কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআই তাকে একবার জেরা করেছিল।
কেজরিওয়ালই ‘মূল চক্রান্তকারী’?
ইডি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালই এই মামলায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’। তিনি দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার ক্ষমতাসীন দল ভারত রাষ্ট্র সমিতির নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে কে কভিতা এবং এএপি নেতা মণীষ শিশোদিয়া ও সঞ্জয় সিংয়ের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কথিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এমন একটি নীতি তৈরি করা হয়েছিল যা দক্ষিণ ভারতের একটি মদ লবিকে উপকৃত করেছিল, যাকে ইডি ‘সাউথ লবি’ বলে অভিহিত করেছে। সুবিধার বিনিময়ে 'সাউথ লবি' আম আদমি পার্টিকে ১০০ কোটি রুপি দেবে বলে জানিয়েছে ইডি।
কয়েকজন অভিযুক্ত ও সাক্ষীর বয়ানে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নাম উঠে এসেছিল বলে ইডি তাদের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে।
কী ছিল নতুন নীতিতে?
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকার ভারতীয় রাজধানীতে একটি নতুন আবগারি নীতি চালু করে ২০২১ সালের নভেম্বরে। ওই নীতি অনুযায়ী, সরকার মদ বিক্রয় থেকে সরে আসে এবং বেসরকারি লাইসেন্সধারীদের মদের দোকান চালানোর অনুমতি দেয়।
সরকার জানিয়েছিল, কালোবাজারি রুখতে, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে এবং সামগ্রিকভাবে গ্রাহকদের সুবিধা দিতেই ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
নীতি অনুযায়ী, মধ্যরাত পর্যন্ত মদের দোকান খোলা রাখা যাবে এবং দোকানে অনেক ধরনের ডিসকাউন্ট দেওয়া যেতো।
নতুন নীতিতে মদের বিক্রি হঠাৎই আকাশ ছুঁয়েছিল এবং দিল্লি সরকারের রাজস্ব বেড়েছিল ২৭ শতাংশ।
তবে বিজেপি ওই নতুন আবগারি নীতির বিরোধিতা করে অভিযোগ করে যে, আবাসিক এলাকায় মদের দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে এএপি সরকার এবং রাজধানীতে ‘মদের সংস্কৃতি’ প্রচার করছে।
দিল্লির মুখ্য সচিব নরেশ কুমার ২০২২ সালের জুলাই মাসে নতুন আবগারি নীতিতে একটি গুরুতর অনিয়মের বিষয় চিহ্নিত করেন। তার রিপোর্টে মদের লাইসেন্সধারীদের ‘অন্যায্য সুবিধা’ দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। করোনা মহামারি চলাকালীন মদের লাইসেন্স ফি বাবদ ১৪৪ কোটি টাকা ছাড়ের কথাও তুলে ধরেন ওই কর্মকর্তা।
মুখ্য সচিবের রিপোর্টের ভিত্তিতে এ ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা। এরপরেই এএপি সরকারের ওপর বিজেপি তীব্র রাজনৈতিক আক্রমণ করতে থাকে। দিল্লির ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে অবশ্য এসব অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়।
তবে বিতর্ক ওঠার পরেই নতুন আবগারি নীতি প্রত্যাহার করে নেয় দিল্লি সরকার। তার ফলে নতুন চালু হওয়া ৪০০টিরও বেশি দোকান বন্ধ হয়ে যায়। নতুন নীতি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত মদ বিক্রি আবার সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা