শিরোনাম
‘আমি তখন আধো ঘুমে। হঠাৎ সজোরে ঘরের দরজা–জানালা কাঁপতে শুরু করল। ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দৌড়ে বাড়ির নিচে নেমে আসি। তখন শুধুই মনে হচ্ছিল, আমি হয়তো মারা পড়তে যাচ্ছি।’
গত শুক্রবার মাঝরাতে (স্থানীয় সময় ১১টা ১১ মিনিট) শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মরক্কো। এ সময় অশীতিপর ঘান্নোউ নাজিম মারাকেশ শহরের বাড়িতে ছিলেন। পরে ভূমিকম্পের সময়কার ভীতিকর অবস্থা এভাবেই বর্ণনা করেন তিনি।
মরক্কোয় ভূমিকম্প যখন আঘাত হানে, তখন দক্ষিণ-পশ্চিমের পর্যটন শহর মারাকেশে নাজিমের মতোই কেউ ছিলেন আধো ঘুমে, কেউবা গভীর ঘুমে, আবার কেউ নিচ্ছিলেন ঘুমানোর প্রস্তুতি। তবে সবার নাজিমের মতো সৌভাগ্য হয়নি। অনেকে মারা গেছেন, অনেকে আহত। আর বিধ্বস্ত বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়েছেন বহু মানুষ। ভূমিকম্পে গতকাল শনিবার (বাংলাদেশ সময়) রাত ১১টা পর্যন্ত ১ হাজার ৩৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মরক্কোতে এযাবৎকালের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প ছিল এটি। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮। শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে মারাকেশসহ মরক্কোর বিস্তীর্ণ জনপদ এক রকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মারাকেশ থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে এক পাহাড়ি এলাকায় উৎপত্তি ভূমিকম্পটির। মারাকেশ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উপকূলীয় তিন শহর রাবাত, কাসাব্লাঙ্কা ও এসাওরিয়া ভূমিকম্পে ভীষণভাবে কেঁপে ওঠে।
সর্বশেষ মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভূমিকম্পে হতাহত ব্যক্তিদের হালনাগাদ হিসাব দিয়েছে। তাতে দেখা যায়, ভূমিকম্পে ১ হাজার ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ২০৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৭২১ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
ভূমিকম্পে মারাকেশ ও এর আশপাশের এলাকায় শত শত ভবন ধসে পড়েছে, নয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হতাহত ব্যক্তি ও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা লোকজনকে উদ্ধারে শুরু হয়েছে তৎপরতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১২০ বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প।
মারাকেশের বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী আবদেল হক। তিনি বলেন, ‘মধ্যরাতে হঠাৎ বড় ধরনের কম্পন শুরু হয়। বুঝতে পারি যে ভূমিকম্প হচ্ছে। দেখলাম, ভবনগুলো দুলছে। এরপরই আমি বাড়ির নিচে নামি। দেখি অনেকেই নেমে এসেছেন। সবাই ভীতসন্ত্রস্ত। আর শিশুরা কাঁদছে।’
ভূমিকম্পের সময় ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মারাকেশের বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী মাইকেল বিজেত। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল বিছানাটা উল্টে যাবে। ভয়ে আমি ছুটে বাড়ির নিচে যাই। এর কিছুক্ষণ পর দেখি পুরো ভবন ধসে পড়েছে। সত্যিকারেই এটা এক বিপর্যয়।’
ভূমিকম্পের সময় ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসা লোকজন রাতভর সড়কেই অবস্থান নিয়ে ছিলেন। আতঙ্কে ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছিলেন না। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে সড়কে বা খোলা জায়গায় শুয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে।
মারাকেশের বাসিন্দা প্রকৌশলী ফয়সাল বাদৌর ভূমিকম্পের সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন জানিয়ে এএফপিকে বলেন, ‘ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার পর আমি গাড়ি থামাই। আমার তখন মনে হচ্ছিল, কত বড় এক বিপর্যয় এটা। ভয় আর আতঙ্কে আমি চিৎকার করে কাঁদতে থাকি।’
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইমেরিটাস অধ্যাপক বিল ম্যাকগায়ার এএফপিকে বলেন, ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প তেমন হয় না, এমন এলাকাগুলোতে যথেষ্ট মজবুত করে ভবন নির্মাণ করা হয় না। আর এতে যখন শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, তখন ভবনগুলো সহজেই ধসে পড়ে এবং অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটে। মরক্কোয় এমনটাই ঘটেছে।
প্রাণঘাতী এ ভূমিকম্পের ঘটনায় মরক্কোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে সমবেদনা।