শিরোনাম
কোরবানি হলো মুসলিমদের একটি ইবাদত। যা প্রতি বছর বিত্তবানদের ওপর আরোপিত হয় নির্দিষ্ট সময়ে। এই ইবাদাতের মাধ্যমে মুসলিমরা মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করে থাকেন। আল্লাহর রাহে যথাসর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার এক আহ্বান এটি। প্রতি বছর আমাদের মাঝে হাজির হয় পবিত্র ঈদুল আজহা।
মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে কোরবানির রেওয়াজ চলে আসছে। হজরত আদম আলাইহিস সালামের দুই সন্তান হাবিল ও কাবিল কোরবানি করেছিলেন। হাবিল ঐকান্তিক আগ্রহ ও নিষ্ঠার সঙ্গে উৎকৃষ্ট জিনিস কোরবানি করলে তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়। পক্ষান্তরে কাবিল অনাগ্রহ ও নিকৃষ্ট জিনিস উৎসর্গ করলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
কোরবানি মানব সমাজে সবসময়ই কোন না কোনভাবে চালু ছিল। আমাদের প্রতিবেশী হিন্দুসমাজেও বলিদান প্রথা চালু আছে। বর্তমান মুসলিম সমাজে চালুকৃত কোরবানি মূলত হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারের চরম আত্মত্যাগের স্মরণ হিসেবেই চলে আসছে।
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন আদরের সন্তানের গলায় ছুরি চালাচ্ছিলেন সেসময় আল্লাহ পাক এক জন্তুর বিনিময়ে হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে ছাড়িয়ে নেন। এ দৃশ্য ছিল অভাবনীয় এবং আল্লাহর কাছে ছিল খুবই প্রীতিকর। সে সময়ের স্মরণ হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত তিনি পশু কোরবানি জারী করে দেন। তাঁর ভাষায় অনাগত মানুষদের জন্য এ বিধান চালু রেখে তার স্মরণ আমি অব্যাহত রাখলাম।
কোরবানি সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন- এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ জিলহজ দুপুর পর্যন্ত মহান আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশে পশু জবাই করাকে ঈদুল আজহা বলা হয়।
কোরবানি অর্থ ত্যাগ স্বীকার। আর এর একটি অর্থ নৈকট্যলাভ। অর্থাৎ আত্মত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমেই নৈকট্যলাভ সম্ভব বিধায় একে বলা হয় কোরবানি। মানব সমাজেও এ নৈকট্য মূলত ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমেই অর্জিত হয়।
বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের যেমন নৈকট্যের মূলে রয়েছে পরস্পরের জন্য ত্যাগ স্বীকার এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নৈকট্যের মূলেও রয়েছে ত্যাগের মনোবৃত্তি। আমাদের বৈষয়িক জীবনের সাফল্য ও ত্যাগ শুধু কোরবানির বিনিময়েই সম্ভব।
যে শিক্ষার্থী নিজের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে রাত জেগে লেখাপড়া করে সাফল্য তাকেই ধরা দেয়। ব্যবসা-বণিজ্য, চাষাবাদ, চাকরি, রাজনীতি সকল ক্ষেত্রে এটিই সত্য। রাজনীতির ক্ষেত্রে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন বহুল প্রচলিত। এ পৃথিবীতে ত্যাগ স্বীকারের মানদন্ডে মানুষকে মূল্যায়ন করা হয়। যে সন্তান তার বাবা-মায়ের জন্য যত বেশি ত্যাগ স্বীকার করে সে তত বেশি নৈকট্য লাভ করে। তেমনিভাবে কর্মী তার ত্যাগের ভিত্তিতে নেতার এবং অফিস-আদালতে অধীনস্থরা ত্যাগের মানদন্ডে বসের নৈকট্য লাভ করে।
আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটাও ত্যাগের মানদন্ডেই নির্ণিত হয়। আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা ও তাঁর হুকুম পালনেও ত্যাগ অপরিহার্য। এমন কি মুসলমান হওয়ার জন্য প্রাথমিক শর্ত নামাজ ও জাকাতের মতো ইবাদতও ত্যাগ ও ধৈর্য ছাড়া সম্ভব নয়। সকল ব্যস্ততা ও আরামদায়ক ঘুম উপেক্ষা করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় ও হিসাব করে জাকাত দেওয়া অতি ত্যাগী ও ধৈর্যশীলদের পক্ষেই সম্ভব। এরপর আল্লাহ পাকের আরও নৈকট্য লাভের জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ এবং দুঃস্থ মানুষ ও আল্লাহর দ্বীনের প্রয়োজনে অকাতরে নিজের ধনসম্পদ দান অসীম ধৈর্য ও ত্যাগের মাধ্যমেই সম্ভব।
মানুষ আল্লাহ পাকের সার্বক্ষণিক গোলাম ও প্রতিনিধি। গোলাম ও প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ তার মনিব আল্লাহ তাআলার বিধান নিজেরা যেমন মেনে চলবে সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র মানবগোষ্ঠী যাতে মেনে চলতে পারে সে পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করাও তার দায়িত্ব। মানুষ যাতে প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে সেজন্য নিয়ম-বিধানও আল্লাহ পাক দিয়েছেন।
তিনি তাঁর প্রথম সৃষ্টি হজরত আদম আলাইহিস সালামকে দুনিয়ায় প্রেরণের সময়ই এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে আমার পক্ষ থেকে যে হেদায়াত যাবে যারা তা অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই। (সুরা বাকারা: আয়াত ৩৮) সঙ্গে সঙ্গে সতর্কও করে দেন যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা বাকারা: আয়াত ১৬৮)
এ পৃথিবীতে আছে একদিকে নবিদের মাধ্যমে পাওয়া আল্লাহর বিধান। যা অনুসরণ করে দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে নেয়ামতে ভরা জান্নাত। আর বিপরীত বিধান হলো- শয়তানের যারা অনুসরণ করে পৃথিবীতে অশান্তির সঙ্গে সঙ্গে দুঃখ-কষ্টের চিরস্থায়ী আবাস জাহান্নাম। দুটি পথই স্পষ্ট। প্রথমটি আল্লাহর বিধানের অনুসারী ঈমানদারদের পথ আর দ্বিতীয়টি শয়তানের অনুসারী কাফিরদের পথ।
কোরআনের ভাষায়, ‘যারা ঈমানের পথ গ্রহণ করেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর পথে আর যারা কুফুরির পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। তোমরা শয়তানের সঙ্গী-সাথীদের বিরুদ্ধে লড়াই কর আর বিশ্বাস কর শয়তানের ষড়যন্ত্র আসলেই দুর্বল।’ (সুরা আন-নিসা: আয়াত ৭৬)
ফলে পৃথিবীতে হক ও বাতিলের এক চিরন্তন দ্বন্দ-সৃষ্টির সূচনা থেকে চলে আসছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত চলবে। আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে যত নবি-রাসুল এসেছেন, তাঁদের প্রায় সবাইকে সমসাময়িক রাজশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে এবং সবাই নানাভাবে নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়েছেন। তাঁদেরকে নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অথচ তাঁরা সবাই ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতা বা ষড়যন্ত্রের কোনো অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে ছিল না।
আল্লাহ তাআলা নিজে বা কোনো জালেম শাসকের মাধ্যমে নবি-রাসুল এবং তাঁদের সঙ্গীদের পরীক্ষা নিয়েছেন। দুনিয়ার সামান্য জীবনের বিনিময়ে আখেরাতে অনন্তকালের জান্নাতি সুখ অবশ্যই ত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়েই অর্জন করতে হবে।
বান্দার পরীক্ষা গ্রহণ আল্লাহর এক স্থায়ী নিয়ম। তাঁর ভাষায় আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়-ভীতি, অনশন, জানমালের ক্ষতি ও আমদানি হ্রাসের দ্বারা পরীক্ষা করবো। বিপদ-মুছিবত উপস্থিত হলে যারা ধৈর্য ধারণ করে ও বলে যে, আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাব। তাদের জন্য সুসংবাদ।
অসংখ্য নবি-রাসুল ও তাঁদের অনুসারীরা জীবন ও সম্পদের কোরবানি দিয়ে আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সম্মানিত হয়েছেন ও জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। আর তাঁদের মোকাবেলায় শয়তানের অনুসারী জালেম শাসক নমরুদ, ফেরাউন, শাদ্দাদ, হামান, কারুণ, আবু জেহেল, আবু লাহাব, উৎবা ও তাদের অনুসারীরা ইতিহাসে ধিকৃত হয়েছে এবং জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছে।
আল্লাহর পথে ত্যাগ ও কোরবানির নজির শুধু ইবরাহিম আলাইহিস সালামই নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সব নবি-রাসুল ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের জীবনে ঘটেছিল। হজরত মুসা, ইসা, জাকারিয়া, ইউসুফ, আইয়ুব. নুহ, ইউনুস আলাইহিমুস সালাম এবং আমাদের প্রিয়তম নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথীদেরসহ অতীতকালের সকল ঈমানদারদের জীবনেই ঘটেছিল।
কোরআন মজিদে ঈমানদারদের নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা বেশি উল্লেখ রয়েছে এবং লক্ষণীয় হলো, যিনি যতবেশি আল্লাহর প্রিয়ভাজন ও নৈকট্যপ্রাপ্ত তিনি ততবেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। এদিক দিয়ে আম্বিয়ায়ে কেরাম প্রথম কাতারে। আল্লাহর পক্ষ থেকে কখনো আবার জালেমদের পক্ষ থেকেও পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। বিপরীতভাবে জালেমদের করুণ পরিণতির কথা কমই উল্লেখ রয়েছে। যেমন- নমরুদ, ফেরাউন, শাদ্দাদ, কেনান, আবু লাহাবসহ অনেকে।
অবশ্য অতীতকালে জাতিগতভাবে ধ্বংসের কথা কোরআন মজিদে বেশ উল্লেখ রয়েছে। শেষ নবি ও তাঁর সাথীদের ওপর জুলুম-নির্য়াতনও ছিল অবর্ণনীয়। মক্কায় দীর্ঘ ১৩ বছর একতরফাভাবে শুধুই নির্যাতিত হয়েছেন। আবার আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাও কম নয়। একে একে পুত্রসন্তানদের ইন্তেকাল ছিল নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য চরম দুঃখ ও বেদনার। সে সময়ে বংশের লোকদের কাছ থেকে শান্তনার পরিবর্তে তাঁকে সহ্য করতে হয়েছিল বিদ্রুপ ও উল্লাস।
আল্লাহ তাআলা তাঁকে শান্তনা দিয়েছিলেন এবং কাওছার দানের সুসংবাদ শুনিয়েছিলেন। কাওছার অর্থ সীমাহীন প্রাচুর্যতা- নাম, যশ, খ্যাতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি, কর্তৃত্ব সবকিছু। সহায়-সম্বলহীন ও চরমভাবে উপেক্ষিত-নির্যাতিত মানুষটিই অল্প দিনের ব্যবধানে মদিনায় একটি সফল ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসের সবচেয়ে সম্মান, মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। আর যশ-খ্যাতি বলতে যা বুঝায় সবই তাঁর, পক্ষান্তরে তাঁর শত্রুরাই হলো জড়কাটা ও শিকড়কাটা।
কাওছার পাওয়া ও টিকিয়ে রাখার জন্য আল্লাহ শর্ত জুড়িয়ে দিয়েছেন তোমার রবের উদ্দেশে নামাজ পড়ো ও কোরবানি কর। অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার জন্য একনিষ্ঠভাবে নামাজ আদায় এবং সবধরনের জুলুম-নির্যাতনের মোকাবেলায় পরম ধৈর্য ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার সয়লাব বয়ে চলেছিল এবং যেখানেই তাঁর পক্ষ থেকে দাওয়াত দান সেখানেই বাধা এসেছিল। কোরআনের প্রতি ছিল তাদের ভয়ানক বিদ্বেষ। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোরআন পাঠে তাদের ছিল ঘোর আপত্তি।
কোরআনের ভাষায় এই কাফিররা বলে, তোমরা কখনই কোরআন শুনবে না আর যখনই কোরআন শোনানো হয় তখনই শোরগোল করবে, হয়তো তোমরা জয়ী হবে। আমি অবশ্যই এ কাফিরদের কঠিন আজাবের স্বাদ আস্বাদন করাবো এবং নিশ্চয়ই সে কাজের প্রতিফল দেব। যে আচরণ তারা করে এসেছে। এ জাহান্নামই হচ্ছে আল্লাহ তাআলার শত্রুদের পাওনা। সেখানে তাদের জন্য চিরস্থায়ী আজাবের ঘর থাকবে। (হামিম আস-সাজদা: আয়াত ২৬-২৮)
আবু জেহেল, আবু লাহাবদের শত প্রচারণা মুখে আর তার মোকাবেলায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে একক প্রচার কাফিররা বরদাশত করতে পারেনি। তাই তিনি গোপনে দাওয়াত দিতে থাকেন এবং টের পেলেই ইসলামের শত্রুরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু গভীর রাতে নামাজ আদায় তার মনিব সহ্য করতে পারেনি। তপ্ত বালুর ওপর শোয়ায়ে দিয়ে বুকে পাথর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ চিত্র আজও দৃশ্যমান। আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত অনেকে শুধুই নির্যাতিত হয়েছেন এবং পরম ধৈর্য অবলম্বন করে গেছেন প্রতিপক্ষের প্রতি কোনো ক্ষোভ বা অমঙ্গল কামনা ছাড়াই।
সুরা ইয়াসিনে এমন একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। একটি লোকালয়ে হেদায়াতের জন্য আল্লাহ পাক তিনজন রাসুল পাঠান এবং তাঁদের দীর্ঘ চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর একজন লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি তাঁর জাতির কাছে ছুটে এসে বলেন, ‘তোমরা আনুগত্য কর সেই রাসুলদের যারা তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চান না এবং নিজেরা হেদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা ইয়াসিন: আয়াত ২১)
এ কল্যাণকামী লোকটিকে শেষ পর্যন্ত তার জাতির লোকেরা হত্যা করে এবং এর বদলে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয় দাখিল হও জান্নাতে। লোকটি তখন বলে ওঠেন, ‘আফসোস! আমার জাতির লোকদের জন্য তারা যদি জানতে পারতো কিসের বদৌলতে আমার রব আমাকে ক্ষমা করলেন ও সম্মানিত লোকদের মধ্যে গণ্য করলেন।’ (সুরা ইয়াসিন: আয়াত ২৭)
অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ আকাঙ্ক্ষা নয় কোনো অমঙ্গল কামনাও নয় বরং তাদের গোমরাহী স্মরণে দুঃখ-ভারাক্রান্ত হওয়া কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার নয়, এটা সম্ভব কেবল তাদেরই জন্য যারা অত্যন্ত শরিফ ও আল্লাহর একান্ত মকবুল বান্দা। আল্লাহ তাঁর নবিকে বলেছেন- ‘ভালো ও মন্দ কখনই এক নয় ; তুমি মন্দকে দূর কর সেই ভালো দ্বারা যা অতীব উত্তম তাহলে দেখবে তোমার জানের দুশমনরা প্রাণের বন্ধু হয়ে গেছে। আর এ গুণ কেবল তারাই লাভ করে যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং এ লোক শুধু তারাই হয় যারা সৌভাগ্যের অধিকারী।’ (সুরা হামিম আস-সাজদা: আয়াত ৩৪-৩৫)
আসুন, আমরা কোরবানির ঐতিহাসিক এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমি ও আমাদের পরিবারকে এক আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার মানসিকতা তৈরি করি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের স্বাস্থ্য-চেহারা এবং ধনসম্পদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি দৃষ্টি দেন তোমাদের অন্তর এবং আমলের প্রতি। সুতরাং কোরবানির আগেই কোরবানি দাতার নিয়ত বা সংকল্প শুদ্ধ করে নিতে হবে।
লেখক: ইসলামি চিন্তক ও গবেষক।