শিরোনাম
করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো। দক্ষিণ এশিয়ায় বলা যায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কথা। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তানও এই পথের পথিক। সব অর্থনৈতিক সূচকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে দেশটি। সংকট থেকে মুক্তি পেতে বিশ্ব দাতা সংস্থাগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সাড়া।
তবে নানা সংকট ও অনিশ্চয়তাকে পাশ কাটিয়ে অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখনো স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের অর্থনৈতিক সফলতা প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্ব মহলে। মিলছে নানা স্বীকৃতি।
সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থার কারণে পাকিস্তানে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। চলতি বছরের ১৯ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০৬ মিলিয়ন ডলার কমে ৯ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে।
মার্কিন ডলারের বিপরীতেও ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে পাকিস্তানি রুপি। সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) লেনদেনে দেখা গেছে, এক ডলার সমান ২৮৭ দশমিক ৪৩ পাকিস্তানি রুপি।
অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান রয়েছে ১০৮ দশমিক ১৬ টাকা। একই সঙ্গে পাকিস্তানি রুপির চেয়েও বাংলাদেশি টাকার মান বেশি। বাংলাদেশি এক টাকা দিয়ে এখন পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৬ পাকিস্তানি রুপি।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২২ সালে ৬ শতাংশ। কিন্তু সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ।
এদিকে বিশ্ব অর্থনীতির ধীরগতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করছে বলে উল্লেখ করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২ সালে হয়েছে ৭ দশমিক এক শতাংশ। ২০২৩ সালে এই হার হতে পারে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে।
মূল্যস্ফীতিতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। দেউলিয়া শ্রীলঙ্কার পরে হতে যাচ্ছে দেশটির অবস্থান। ২০২১ সালে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০২২ সালে ১২ দশমিক দুই শতাংশ। তবে চলতি বছর এই হার বেড়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৮ দশমিক তিন শতাংশে, যা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক কম। তবে এই হার ২০২৪ সালে কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
ব্যাংকটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপি হার ছিল ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২২ সালে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে দেশটিতে এই হার শূন্য দশমিক এক শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রেও ভিন্ন চিত্র বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩ সালে এই হার হতে পারে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। তবে এই হার আগামী বছর আবার বাড়বে।
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু যেখানে বেড়ে ৭২ বছরের বেশি হয়েছে, সেখানে পাকিস্তানের মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছরের নিচে। যেখানে পাকিস্তানে ৭৫ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়, সেখানে বাংলাদেশ প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশের বেকারত্ব হার ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানে এই হার ছিল ৬ শতাংশের উপরে।