অভ্যুত্থানের পর থেকে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে মিয়ানমার

ফানাম নিউজ
  ২০ মে ২০২৩, ০৬:৪৩

সবশেষ সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে মিয়ানমার। এর বেশিরভাগই দিয়েছে রাশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, ভারত ও থাইল্যান্ড। মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রু গত বুধবার (১৭ মে) এক লিখিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। এরপর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বিপুল অস্ত্রশস্ত্র কিনেছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির উপকরণগুলো নৃশংস অপরাধের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে ১২ হাজার ৫০০টিরও বেশি ক্রয় বা রেকর্ডকৃত চালানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা সরাসরি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা তাদের পক্ষে কাজ করা অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে।

টম বলেছেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সরবরাহ করা পণ্যের বৈচিত্র্য ও পরিমাণ বিস্ময়কর। যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে ড্রোন, যোগাযোগ সরঞ্জাম, নৌবাহিনীর জাহাজের অস্ত্র ও নানা অত্যাধুনিক উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে তাদের।

জাতিসংঘ প্রতিনিধির প্রতিবেদনে গত মাসে সাগাইং অঞ্চলে শতাধিক বেসামরিক লোক হত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওইদিন পাজিগ্যি গ্রামে অভ্যুত্থানবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) একটি নতুন কার্যালয় উদ্বোধনে জড়ো হয়েছিল প্রায় ৩০০ গ্রামবাসী। এসময় তাদের ওপর রাশিয়ার তৈরি ইয়াক-১৩০ যুদ্ধবিমান থেকে ২৫০ কেজি ওজনের বোমা ফেলা হয়। এতে নারী, পুরুষসহ বহু শিশু প্রাণ হারায়, আহত হয় অনেকে।

এরপরও থামেনি জান্তা বাহিনী। বোমার আঘাত থেকে বেঁচে যাওয়া এবং আহতদের সাহায্য করতে যাওয়া লোকদের ওপর দুটি এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করে সেনারা। এতে অন্তত ১৬০ জন প্রাণ হারায়, যার মধ্যে মাত্র ৫৯ জনের মরদেহ শনাক্তযোগ্য অবস্থায় পাওয়া যায়।

‘এই হামলা মিয়ানমার জান্তার মানবতার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অপরাধ এবং জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের আরেকটি উদাহরণ’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে।


কারা দিচ্ছে অস্ত্র

প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ার বিভিন্ন সংস্থা থেকে ৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের অস্ত্র ও সম্পর্কিত সরঞ্জাম কিনেছে মিয়ানমার। চীন থেকে পেয়েছে ২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের অস্ত্র, সিঙ্গাপুরও দিয়েছে একই মূল্যের অস্ত্র-সরঞ্জাম।

এছাড়া ভারত থেকে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের এবং থাইল্যান্ড থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের অস্ত্র কিনেছে মিয়ানমার।

জাতিসংঘ প্রতিনিধির প্রতিবেদন অনুসারে, মিয়ানমারের কাছে অস্ত্রবিক্রেতাদের মধ্যে রাশিয়া, চীন এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাও রয়েছে।

টম অ্যান্ড্রু জানিয়েছেন, তিনি তার প্রতিবেদনের তথ্যগুলো সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোকে জানিয়েছেন।

প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া এবং চীন জাতিসংঘের এই প্রতিনিধিকে তার ম্যান্ডেটের বাইরে যাওয়া এবং ‘বৈধ অস্ত্র বাণিজ্যের মানহানি’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছে।

ভারত বলেছে, তার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের অস্ত্র চুক্তিগুলো আগের সরকারের আমলে সই হয়েছিল।

তবে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।