শিরোনাম
সম্প্রতি নতুন কিছু ফিচারের ঘোষণা দিয়েছে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। গত বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ে গুগলের বার্ষিক ডেভেলপার কনফারেন্সে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (জেনারেটিভ এআই) জিমেইলের নতুন রাইটিং টুল এবং গুগল ম্যাপের ইমার্সিভ ডিরেকশনসহ আর কিছু নতুন ফিচারের বিষয়ে জানিয়েছে গুগল। তবে সে সময় এমন একটি ঘোষণাও এসেছে যা প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের দৃষ্টি সেভাবে আকর্ষণ করতে পারেনি। ২০০০-এর দশকের শুরুতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ইন্টারনেটে যুগান্তকারী বদল এনেছিল গুগল।
এবারও সেই একই ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে গুগল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল উপস্থাপনের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে এই প্রযুক্তি কোম্পানি।
এটা অনেকটা প্রকাশনা শিল্পের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলার মতো ঘটনা। এমনিতেই টিকে থাকার জন্য এই শিল্পটি ইতোমধ্যেই যথেষ্ট সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এর মধ্যে যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই জায়গা দখল করে নেয় তবে তার পরিণতি হবে বেশ ভয়াবহ। একই সঙ্গে প্রকাশনা শিল্পকে টিকিয়ে রাখাও বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।
সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলের ক্ষেত্রে জেনারেটিভ এআই কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে বুধবার গুগল তাদের পকিল্পনার কথা জানিয়েছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিন বছরের কম বয়সী শিশু ও পোষা কুকুর আছে এমন পরিবারের জন্য কোনটি ভালো, ব্রাইস ক্যানিয়ন (জাতীয় উদ্যান) নাকি আর্চেস? অর্থাৎ এ ধরনের পরিবার কোথায় ঘুরতে যেতে পারে।
সাধারণত এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সরাসরি গুগলে পাওয়া যায় না। আমরা হয়তো অনুসন্ধান করলে ব্রাইস ক্যানিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে জানতে পারবো। এক্ষেত্রে গুগল আমাদের কিছু ওয়েবসাইটের তথ্য দেয় যেখান থেকে আমরা এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পেতে পারি। কিন্তু গুগল তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন টুল ব্যবহার করে এর অনুসন্ধানের পর দেখা গেল শিশু এবং কুকুরটির অবস্থা বিবেচনা করে স্বাভাবিক কথাবার্তার মতোই একটি টেক্সট আকারে উত্তর দিচ্ছে জেনারেটিভ এআই।
এগুলো কিভাবে কাজ করে? এর উত্তর হচ্ছে জেনারেটিভ এআই অনেকটা ম্যাজিক ট্রিকের মতো কাজ করে। ওপেন ওয়েবে উপলব্ধ সবকিছু পড়ার মাধ্যমে এআইকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে সব প্রশ্নের প্রায় নির্ভুল উত্তর পাওয়া সম্ভব।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, অনলাইন প্রকাশনা শিল্পের ক্ষেত্রে এটি কেন ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। কারণ, ইন্টারনেটে বিদ্যমান সব তথ্য দিয়ে কঠিন সব প্রশ্নের উত্তর দেবে গুগল এআই। ফলে গুগল ব্যবহারকারীদের আর অন্য কোনো ওয়েবসাইটে এসব তথ্য খুঁজতে হবে না। অথচ গ্রাহকরা যেন তাদের ওয়েবপেজে আসে সেটাই অনলাইন প্রকাশনা শিল্প চায়। কারণ সাবস্ক্রিপশন এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই তারা আয় করে থাকে।
নিউইয়র্ক টাইমস এবং ফোর্বস ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বড় বড় সব অনলাইন প্রকাশনার পাশাপাশি স্বাধীন লেখক এবং সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও এটাই সত্য এবং বাস্তবিক। মানুষ যে কেনো প্রশ্নের উত্তর যখন সহজেই গুগলের এআই ব্যবহারের মাধ্যমে পেয়ে যাবে তারা তখন অন্য ওয়েবসাইটে কম ঢুকবে। ফলে বিজ্ঞাপন থেকে এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের আয় আরও বাড়বে। অর্থাৎ অনলাইন প্রকাশনাগুলোর বিজ্ঞাপনেও ভাগ বসাবে গুগল। তবে কবে নাগাদ গুগল তাদের নতুন এআই সেবা চালু করবে সে বিষয়টি এখনই স্পষ্ট নয়।
সূত্র: ফোর্বস নিউজ