শিরোনাম
সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের খার্তুম থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য অভিযান পরিচালনা করেছে।
রোববার (২৩ এপ্রিল) ভোরের ওই অভিযানে ছয়টি আকাশযান ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানায় সুদানের প্যারা মিলিটারি বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। মার্কিন কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করেছে বলে দাবি করেছে সুদানে লড়াইরত দুই বাহিনীর একটি আরএসএফ।
তবে ঘটনার বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। এমনকি কতজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেটিও নিশ্চিত নয়। অবশ্য এই অভিযানের আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিসি নিউজ তাদের প্রতিবেদনে ৭০ জন সরকারি কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল।
বাইডেন জানিয়েছেন, খার্তুমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এখন বন্ধ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমরা সুদানে মার্কিন দূতাবাসের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছি।
অভিযান সফল করতে সহায়তার জন্য জিবুতি, ইথিওপিয়া ও সৌদি আরবকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে দূতাবাসকর্মীদের ‘সাহস ও পেশাদারত্ব’ এবং তাদের যারা সরিয়ে এনেছেন সেই সেনা সদস্যদের দক্ষতার প্রশংসা করেছেন তিনি।
গত সপ্তাহে সুদানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হলো।
এর আগে, গত শনিবার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাসহ ১৫০ জনেরও বেশি বিদেশি নাগরিককে সাগরপথে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে নেওয়া হয়। এদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিক। এছাড়া মিশর, পাকিস্তান এবং কানাডার নাগরিকও ছিলেন তাদের মধ্যে।
আরবি নিউজ চ্যানেল আল হাদাত বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি আকাশযান খার্তুমের মার্কিন দূতাবাস কম্পাউন্ডে অবতরণ করে। বেশ কিছু টুইটার ব্যবহারকারী তাদের পোস্টে দূতাবাসে হেলিকপ্টার ওঠানামার কথা জানিয়েছেন।
খার্তুম বিমানবন্দরে বারবার গোলা ও গুলিবর্ষণের কারণে প্লেনে করে লোকজন সরিয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা টিমের পরামর্শে শনিবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন খার্তুম থেকে মার্কিন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
বাইডেন তার বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা সুদানে থাকা মার্কিন নাগরিকদের সহযোগিতার বিষয়ে চলমান কার্যক্রম নিয়ে নিয়মিত রিপোর্ট পাচ্ছি। আমরা আমাদের সহযোগী ও অংশীদারদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।
সুদানে চলমান সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এটি অযৌক্তিক এবং দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত। বাইডেন বলেন, যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে অবশ্যই অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে মানবিক সহায়তার সুযোগ দিতে হবে এবং সুদানিজ জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করতে হবে।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানে ব্যাপক লড়াই শুরু হয়। সুদানে কীভাবে বেসামরিক শাসন ফেরানো হবে, তা নিয়ে দুই ক্ষমতাধর সামরিক অধিনায়কের দ্বন্দ্ব থেকে এই লড়াই চলছে।
সুদানের বর্তমান সামরিক সরকার চলে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে। তার সঙ্গে উপনেতা হিসেবে রয়েছেন আরেকটি আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি দাগালো।
বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই দুটি বাহিনীকে একীভূত করার কথা। কিন্তু আরএসএফ তাদের বিলুপ্ত করার বিপক্ষে এবং এই পরিকল্পনা থামানোর জন্য নিজেদের বাহিনীকে রাস্তায় নামায়। এরপর থেকে এটি সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ লড়াইয়ে রূপ নেয়।
যুক্তরাজ্য বলছে তারাও তাদের কর্মীদের সরিয়ে আনার উপায় খুঁজছে। সুদানে ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে, নাগরিকরা কে কোথায় রয়েছেন সেটি জানাতে বলা হয়েছে। শিগগির যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রমও শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে শনিবার জরুরি সভা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সফর সংক্ষিপ্ত করে লন্ডনে ফিরে গেছেন।
তবে যুক্তরাজ্যের কিছু নাগরিক সুদানে আটকা পড়েছেন এবং যথেষ্ট যোগাযোগ না থাকায় উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
খার্তুম থেকে ইমান আবু গার্গা বলেছেন, তিনি ও তার দুই সন্তানের নাম রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কিন্তু তারপর থেকে কিছুই হচ্ছে না।
তিনি বলেন, কোনো সময়সীমা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। কী হচ্ছে তাও জানি না। খার্তুম বিমানবন্দর ছাড়া অন্য কোথাও থেকে আমাদের নেওয়া হবে? আমরা কি সড়কপথে যাচ্ছি? এটা হতাশাজনক যে কেউ যোগাযোগ করেনি।
আরেকজন ব্রিটিশ নাগরিক বিবিসি’কে বলেছেন, তার কাছে কাছে মনে হচ্ছে, ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘সম্পূর্ণ পরিত্যাগ’ করেছে।
তবে যুক্তরাজ্য সরকার বলছে, খার্তুমে থাকা কূটনীতিক ও ব্রিটিশ নাগরিকদের সহায়তা করতে সম্ভাব্য সব কিছু করা হচ্ছে।
সুদানের সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সেনাপ্রধান ফাত্তাহ আল-বুরহান বিদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাজি হয়েছেন।
অন্যদিকে, কানাডা সুদানে থাকা তাদের নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ছয়টি প্লেন জিবুতিতে পাঠিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সুদানে চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মানুষ মারা গেছে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো।