শিরোনাম
পবিত্র রমজান মাসে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে বিনামূল্যে এক ব্যাগ আটা পাওয়ার জন্য লাইন দিচ্ছে শত শত মানুষ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের কারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ‘দরিদ্রদের মধ্যে দরিদ্রতম’ লোকদের জন্য গত মার্চে বিনামূল্য আটা বিতরণ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সরকারের দেওয়া এই আটা নিতে উত্তপ্ত রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রযুক্তি খাতের কর্মী ওয়াকাস চৌধুরী। ২০ বছর বয়সী এ তরুণ জানান, আগে কোনোদিন এ ধরনের সাহায্য নেওয়ার দরকার পড়েনি তার। ওয়াকাস বলেন, সব কিছুর দাম এত বেড়েছে যে, টিকে থাকাই মারাত্মক কঠিন হয়ে গেছে।
পাকিস্তানে গত এক মাসে বিনামূল্যে আটা নিতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে প্রায় দুই ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির মানবাধিকার কমিশন এর জন্য সরকারি আটা বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ‘অব্যবস্থাপনা’কে দায়ী করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রায় ২৩ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে গত মার্চ মাসে ভোগ্যপণ্যের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।
পাকিস্তানের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশটিতে গত বছরের তুলনায় খাদ্য, বেভারেজ ও পরিবহন খরচ বেড়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে আটার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো আম্মার খানের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী শস্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির রেকর্ড মূল্যহ্রাসের ফলে আমদানি আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে, যার কারণে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। পশুখাদ্য এবং খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির ঘাটতিও খাদ্য সংকট ও ক্ষুধাবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহকারী বেসরকারি সংস্থা সায়লানি ওয়েলফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্ট জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে এ বছর ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
সৈয়দ নাসির নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, বাচ্চাদের স্কুলের ফি দিতে পারছি না। আমরা শুধু পানি ও একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করি... অন্য সুস্বাদু খাবারগুলো এখন কেবল স্বপ্নেই দেখতে পারি।
পাকিস্তানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই অর্থনৈতিক হতাশা এক ব্যাগ আটা দিয়ে শেষ হবে না, যার ফলে এবারের রমজানে দেশটির অনেক মানুষকেই ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে।