যুদ্ধের পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হলো ইউক্রেন

ফানাম নিউজ
  ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০৩

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের বেশ কিছু গোপন নথি, মানচিত্র, বিভিন্ন নকশা ও ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। অনলাইনে ফাঁস হওয়া এসব নথির মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের বিস্তারিত টাইমলাইন এবং অসংখ্য দুর্ভেদ্য সামরিক শব্দসহ কাগজপত্র, যার ওপরে ‘অত্যন্ত গোপনীয়’ শব্দ লেখা।

এসব নথিতে জানা যাচ্ছে, উভয়পক্ষে কতজন হতাহত হয়েছে, দু’পক্ষের সামরিক দুর্বলতা কী কী, বিশেষ করে তাদের সামরিক শক্তির দিকগুলো কী হতে পারে? এসব তথ্য ফাঁস হলো এমন এক সময়, যখন ইউক্রেন তাদের বহু প্রত্যাশিত বসন্তকালীন পাল্টা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রথমত, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে এটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় তথ্য ফাঁসের ঘটনা। এর কিছু কাগজপত্র ছয় মাসের পুরোনো, কিন্তু সেগুলোরও বিশাল প্রভাব রয়েছে।

পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, নথিগুলো জাল নয়, আসল।

এ ধরনের ২০টি নথি পরীক্ষা করে বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যেসব সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিশদ বর্ণনা রয়েছে এতে। সেই সঙ্গে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন আক্রমণ পরিচালনার জন্য ইউক্রেনের বেশ কিছু ব্রিগেডকে একত্রিত করার বর্ণনাও তুলে ধরা হয়েছে।

কখন এসব ব্রিগেড আক্রমণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে এবং সেগুলোর জন্য পশ্চিমা মিত্রদের দেওয়া ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও কামানের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ফাঁস হওয়া নথিতে।

একটি মানচিত্রে একটি এলাকাকে ‘কাদা-বরফে আচ্ছাদিত এলাকা’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বসন্ত এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব ইউক্রেনের স্থল পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয়েছে।

এই শীতেই ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা পর্যন্ত হামলা মোকাবিলা করেছে। সেখানে কিয়েভের ক্রমশ কমতে থাকা প্রতিরক্ষা ক্ষমতার একটি গভীর বিশ্লেষণও রয়েছে।

ফাঁস হওয়া এসব নথিপত্রে রাষ্ট্র হিসেবে শুধু ইউক্রেনের অবস্থাই তুলে ধরা হয়নি, সেখানে ওয়াশিংটনের আরও কিছু মিত্রের বিষয়েও তথ্য রয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে ইসরায়েল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার বিষয়টি এসব নথিতে উঠে এসেছে।

এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র ‘চরম গোপনীয়’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার কিছু নথিপত্রের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ গোয়েন্দা সহযোগীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা যাবে।

কীভাবে এসব নথিপত্র ডিসকর্ড নামে একটি মেসেজিং অ্যাপ থেকে ফোরচ্যান হয়ে টেলিগ্রামে গেছে, সেটি তুলে ধরেছেন ইনভেস্টিগেটিভ ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ বেলিংক্যাটের এরিক টোলার।

তিনি বলেছেন, ঠিক কোথা থেকে এসব তথ্য এসেছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে গেমারদের কাছে জনপ্রিয় একটি সাইটে গত মার্চ মাসে এসব নথিপত্র প্রথমবার প্রকাশ করা হয়।

কম্পিউটার গেম মাইনক্রাফটের একদল খেলোয়াড়ে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ডিসকর্ডে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলছিল। এই সময় একজন বলেন, ‘এই দেখো, এখানে কিছু ফাঁস হওয়া নথিপত্র রয়েছে।’ এরপর তিনি ১০টি নথি পোস্ট করেন।

এভাবে নথিপত্র ফাঁস বিরল হলেও একেবারে নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তির নথিপত্র এভাবে রেডিট, ফোরচ্যান এবং অন্যান্য সাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই সময় রেডিট জানিয়েছিল, এসব নথিপত্র রাশিয়া থেকে এসেছে।

গত বছর আরেকটি ঘটনায় অনলাইন গেম ওয়ার থান্ডারের খেলোয়াড়রা বেশ কিছু স্পর্শকাতর সামরিক নথিপত্র প্রকাশ করেছিল। তবে সবশেষ নথি ফাঁসের ঘটনাটি অনেক বেশি স্পর্শকাতর ও অনেক বেশি ক্ষতিকর বলে মনে করা হচ্ছে।

নিজেদের ‘অভিযানের নিরাপত্তার’ বিষয়গুলো ইউক্রেন অনেক বেশি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকে। ফলে এরকম স্পর্শকাতর তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে, সেটি তাদের ভালো লাগার কথা নয়। ইউক্রেন যে ‘বসন্তকালীন আক্রমণের’ পরিকল্পনা করছে, তা এই যুদ্ধের চিত্র বদলাতে এবং পরবর্তীতে শান্তি আলোচনায় নিজেদের অবস্থান জোরালো করে তুলতে পারে।

তবে সামরিক ব্লগাররা মনে করেন, নথি ফাঁসের ঘটনাটি পশ্চিমাদের সাজানো নাটকও হতে পারে। এর মাধ্যমে হয়তো তারা রাশিয়ার সেনা কমান্ডারদের বিভ্রান্ত করতে চায়।

সূত্রের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে গোপন নথি ফাঁসের জেরে যুদ্ধ পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে ইউক্রেন।

সিএনএন ফাঁস হওয়া ৫৩টি নথি পর্যালোচনা করেছে, যার সব কয়টি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের শুরুর দিকে তৈরি করা বলে মনে হচ্ছে।

একটি নথি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করেছে। এটি আশ্চর্যজনক না হলেও জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ সূত্রটি বলেছে, ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা পেন্টাগনের তথ্য ফাঁসের ঘটনায় খুবই হতাশ।