শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) কিনে নিয়েছে দেশটির আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক। রোববার (২৬ মার্চ) সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক কিনে নেওয়ার এ চুক্তি ঘোষণা করে ইউএস ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (এফডিআইসি)।
এ অধিগ্র্র্র্রহণ চুক্তির আওতায় সোমবার (২৭ মার্চ) থেকে এসভিবির ১৭টি শাখার সবগুলোই ফার্স্ট সিটিজেনস ব্র্যান্ডের অধীনে কার্যক্রম শুরু করবে। এর ফলে এসভিবির আমানতকারীরা এখন থেকে ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংকের আমানতকারী হিসেবে গণ্য হবেন।
এদিকে, এসভিবি গ্রাহকদের নিজ নিজ শাখা ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে এফডিআইসি। মূলত ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক থেকে অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি স্থানান্তরিত হওয়ার নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত গ্রাহকদের সবাইকে বর্তমান শাখা ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।
জানা যায়, নিজেদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক বলে দাবি করে ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমস্যাগ্রস্থ ব্যাংকগুলোর বৃহত্তম ক্রেতাদের মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে এটি। যুক্তরাষ্ট্রের ২৩টি অঙ্গরাজ্যে সাড়ে ৫০০’রও বেশি শাখায় সেবা দিয়ে আসছে ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক।
সোমবার এক বিবৃতিতে ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক বলে, এফডিআইসি থেকে সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের ১১ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ, ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের আমানত ও ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ঋণ বুঝে নেবে। ব্যাংকটি দাবি করে, আইএফডিসির সঙ্গে তাদের যে চুক্তি হয়েছে, তা বাণিজ্যিক ঋণের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় সাহয্য করবে।
ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সিইও ফ্র্যাঙ্ক বি বলেছেন, এ চুক্তির মাধ্যমে আমরা সিলিকন ভ্যাল ব্যাংকের সব গ্রাহক যেসব সমস্যায় পড়েছেন, তা সমাধানের সর্বচ্চো চেষ্টা চালিয়ে যাবো। আর এসব সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমাদের শক্ত ভিত রয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (এসভিবি) বিপর্যয়ের পর দেউলিয়া হয়ে যায় সিগনেচার ব্যাংক নামের আরকেটি মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, পরপর দুটি ব্যাংক বিপর্যয়ের মুখে পড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৃষ্ট উদ্বেগ বা ভীতি এখনও রয়ে গেছে। আর এর জেরে শুক্রবার (২৪ মার্চ) ব্যাংক শেয়ারে দরপতন দেখা যায়।
গত ৮ মার্চ সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজেদের কিছু শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের ঘোষণা দেয়। কিন্তু এ ঘোষণাই কাল হয়ে দাঁড়ায় ৪০ বছরে পুরোনো ব্যাংকটির জন্য। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকহারে জামানত তুলে নেওয়া শুরু করেন, কমতে থাকে শেয়ারের দরও।
জানা যায়, শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেওয়ার পর গ্রাহকরা এক দিনে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার পরিমাণ অর্থ তুলে নেন। আর তাতেই মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি দেউলিয়া হয়ে যায় এ ব্যাংক। পরিস্থিতি বিবেচনায় ১০ মার্চ ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকটি বন্ধ করে দিয়ে তাদের সব আমানতের দায় নিজেদের কাঁধে তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ২০০৮ সালে ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাংকের পর এসভিবির পতন দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক বিপর্যযয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘটনার পর ১৯ মার্চ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সুইজারল্যান্ডের অন্যতম বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইস ব্যাংক। পরে সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যস্থতায় ব্যাংকটিকে কিনে নেয় দেশটির বৃহত্তম ব্যাংক ইউবিএস।