বিক্ষোভের তরঙ্গে পিছু হটলেন নেতানিয়াহু

ফানাম নিউজ
  ২৮ মার্চ ২০২৩, ০১:৩০

ইসরায়েলে অভ্যন্তরীণ সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে চলছে নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ।

কয়েকদিন ধরেই বিচার বিভাগের সংস্কার করার যে পরিকল্পনা নেতানিয়াহু করেছেন, তার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। খবর বিবিসির।

বিক্ষোভের মুখে আজ এ সংস্কার বিল পার্লামেন্টের আগামী অধিবেশন পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের চলমান এ সংকট নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো।

ইসরায়েলে বিক্ষোভ চলছে

বিচার বিভাগের সংস্কার নিয়ে এ বছরের শুরু থেকে প্রতি সপ্তাহে বড় বড় বিক্ষোভ শুরু করছেন দেশটির জনগণ। ধীরে ধীরে বিক্ষোভের মাত্রা বাড়তে থাকে। বিক্ষোভ বড় বড় শহর থেকে ছোট শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলো হয় তেল আবিবে।

বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি দুটি। একটি, বিচার বিভাগে সংস্কারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসা। দ্বিতীয়টি, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ।

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক বিরোধীরা। তবে নেতানিয়াহুর পক্ষের অনেকেও এতে তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনীর মেরুদণ্ড যাদের বলা হয়, সামরিক বাহিনীর সেই রিজার্ভ সেনারাও কাজে যোগদান না করে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। আর এতে করে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি তৈরির একটি ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েলিরা এত ক্ষুব্ধ কেন

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরোধীরা বলছেন, বিচার বিভাগের সংস্কার আনার যে পরিকল্পনা সরকার করছে, এতে করে বিচারব্যবস্থা দুর্বল ও সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়বে। হুমকিতে পড়বে দেশের গণতন্ত্র।

অথচ সরকারের ক্ষমতা ব্যবহারের লাগাম টানতে ঐতিহাসিকভাবে বিচার বিভাগ অপরিসীম ভূমিকা রেখে এসেছে। দুর্নীতির অভিযোগে ইসরায়েলের আদালতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিচার চলছে।

তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। সরকার সমালোচকেরা বলছেন, বিচার বিভাগের সংস্কার নেতানিয়াহুকে বিচারের হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে এবং এতে করে কোনো বাধা ছাড়া সরকার আইন পাস করতে পারবে।

বিচার বিভাগের সংস্কার পরিকল্পনায় কী আছে

নেতানিয়াহু সরকার বিচার বিভাগে সংস্কার আনার যে পরিকল্পনা হাজির করেছে, তাতে করে যেকোনো আইন পর্যালোচনা ও বাতিল করার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাবে।

দেশের পার্লামেন্টে মাত্র একজন আইনপ্রণেতার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার আদালতের যেকোনো সিদ্ধান্ত পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা পাবে।

কী করবে নেতানিয়াহু সরকার

কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভ এবং দেশজুড়ে প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখনো বিচার বিভাগ নিয়ে তাঁর সরকার গৃহীত সংস্কার পরিকল্পনা থেকে সরে না আসার বিষয়ে অবিচল ছিলেন।

অপরদিকে চলমান এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন তিনি।

তবে এত যুক্তি দেওয়ার পরও সরকারের ওপর চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিচার বিভাগে সংস্কার আনার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেখান থেকে সরে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

এ কারণে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন নেতানিয়াহু। এ কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। আজ জেরুজালেমে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভে লাখো মানুষ সমবেত হন। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সেবা খাত। সেনাসদস্যদের অনেকেও কাজে যোগ দেননি। অনেকটা অচলাবস্থার মধ্যে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, বৃহত্তর ঐকমত্য তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বিচার বিভাগের সংস্কার প্রস্তাব পার্লামেন্টে তোলা থেকে বিরত থাকছেন তিনি।