শিরোনাম
আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর ‘বেআইনি হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগের বিষয়ে ‘স্বাধীন’ ও ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। বুধবার (২২ মার্চ) থেকে এ তদন্তের কাজ শুরু হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান লর্ড জাস্টিস হ্যাডন-কেভ এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ এগিয়ে আসার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে অবস্থানকালে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে। আর গত বছরের ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত তদন্তের ঘোষণা দেওয়া হয়। তার পাশাপাশি তদন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠু বা পর্যাপ্ত হচ্ছে কি না তাও দেখা হবে বলে জানানো হয়।
এ তদন্ত কমিটির প্রধান লর্ড জাস্টিস হ্যাডন-কেভ বলেন, ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী ও দেশের সুনাম রক্ষার জন্য এ তদন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া অভিযোগগুলোকে ‘অত্যন্ত গুরুতর।’
জানা যায়, ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে আফগানিস্তানে ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সেস (কমান্ডো) বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ তদন্তে ওই বাহিনীর পরিচালিত নৈশ অভিযানগুলো নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হবে। তাছাড়া, আইন বহির্ভূত হত্যা ও পরবর্তীকালে সেগুলো ধামাচাপা দেওয়া– দুটি অভিযোগই খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
কমিটির প্রধান লর্ড জাস্টিস হ্যাডন-কেভ আরও বলেন, যে বা যারা আইন ভঙ্গ করেছে তদন্তের জন্য তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এর পাশাপাশি যারা নির্দোষ তাদের ওপর থেকেও সন্দেহের কালো মেঘ দূর করতে হবে।
গত বছর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে ছয় মাস দায়িত্ব পালনকালে ব্রিটিশ কমান্ডো বাহিনীর একটি স্কোয়াড্রনের হাতে কমপক্ষে ৫৪ জন আফগান নিহত হয়েছেন।
তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ কমান্ডো বাহিনীর ডেলিবারেট ডিটেনশন অপারেশন বা ডিডিও নামে পরিচিত নৈশ অভিযানের বিষয়টি বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হবে।
হ্যাডন-কেভ জানান, তদন্তের অনেক শুনানির প্রকৃতি ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ হওয়ায় শুনানির গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে। তাছাড়া ডিডিওতে ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে নিহত দুই পরিবারের আইনি চ্যালেঞ্জও তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিডিওতে নিহত কিছু পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছে লেই ডে নামের একটি আইনি প্রতিষ্ঠান। লেই ডে’র সদস্য টেসা গ্রেগরি বলেন, আমার মক্কেলরা তদন্তের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
‘বছরের পর বছর ধরে গোপনীয়তা ও ধামাচাপার মধ্য দিয়ে প্রিয়জন হারানো মানুষগুলো ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছেন। তাদের আশা, এ তদন্ত আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর কর্মকাণ্ড সবার সামনে নিয়ে আসবে।’
২০১৪ সালে রয়্যাল মিলিটারি পুলিশ ‘অপারেশন নর্থমুর’ শুরু করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল বেআইনি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগগুলো তদন্ত করা। কিন্তু কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই ২০১৯ সালে ওই তদন্তকে বন্ধ ঘোষনা করা হয়।
সে সময় ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছিল, অপারেশন নর্থমুরের পরিধিতে ৬০০টিরও বেশি কথিত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, অপরাধের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গত বছর রয়্যাল মিলিটারি পুলিশের তদন্তকারীরা বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, অপারেশন নর্থমুর চলাকালে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের সময় ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী বাধা দিয়েছিল। অপরাধের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দেওয়া প্রতিরক্ষা বিভাগের বিবৃতিকে বিতর্কিত বলে দাবি করে রয়্যাল মিলিটারি পুলিশ।
তাছাড়া আইনি সংস্থাটি দাবি করে, ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নথিতে আফগানিস্তানে যুক্তরাজ্যের বিশেষ বাহিনীর বেআইনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রায় সবই জানেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু মিলিটারি পুলিশকে তারা এসব তথ্য জানাননি।
গত বছর বিবিসির একটি তদন্তে অভিযোগ করা হয়েছিল, যুক্তরাজ্যের স্পেশাল এয়ার সার্ভিস (এসএএস) ইউনিট ২০১০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে অবস্থানরত তালেবান কমান্ডারদের আটক করতে বেশ কয়েকটি অভিযান চালায়। সেসব অভিযানে কয়েকজন নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
জানা যায়, নতুন তদন্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ছাড়াও ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ ও রয়্যাল মিলিটারি পুলিশের তদন্ত পর্যাপ্ত ছিল কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখা হবে।
২০১২ সালে ব্রিটিশ কমান্ডো বাহিনীর নৈশ অভিযানে নিহত হন আফগান কৃষক আব্দুল আজিজ উজবাকজাইয়ের ছেলে ও পুত্রবধূ। বিবিসিকে তিনি বলেন, এ তদন্ত আমার ছেলে ও পুত্রবধূকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। তবে ১১ বছর পর আমি এখনও চাই যে ব্রিটিশ সেনা ও অন্যান্য কর্মকর্তারা এগিয়ে এসে সত্য প্রকাশ করুক। আমরা জানতে চাই, কেন আমাদের টার্গেট করা হয়েছিল।
ভুক্তভোগী ‘নুরজাই’ পরিবারের এক সদস্য বলেন, আমরা এ আশায় আছি যে, অপরাধীদের একদিন জবাবদিহি করতেই হবে। ১০ বছর আগে আমি আমার দুই ভাই, ছোট ফুফু ও ছোটবেলার এক বন্ধুকে হারিয়েছি। তাছাড়া ব্রিটিশ সৈন্যরা আমাকে বাড়ির বাইরে এনে হাতকড়া পরিয়ে মারধর করে ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমরা চাই, এ নির্মমতার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার হোক।