শিরোনাম
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় চীনা অ্যাপ টিকটিক নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে বেইজিং-ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক বৈরিতা দেখা দিয়েছে। মার্কিন সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, চীনা মালিকরা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি বিক্রি না করলে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হবে।
প্রতি তিনজন মার্কিন নাগরিকের মধ্যে একজন টিকটক ব্যবহার করেন। আর এ ধরনের জনপ্রিয় কোনো অ্যাপের উপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা নজিরবিহীন। খবর বিবিসির।
তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক, যুক্তরাষ্ট্র কেন চীনা এ অ্যাপটি নিষিদ্ধ করতে চায়-
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার উদ্বেগ, অ্যাপটি সরকারি মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটারে ব্যবহার করা হলে যেকোনো সংবেদনশীল তথ্য অন্যের হাতে চলে যেতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, টিকটক অন্যান্য অ্যাপের মতো একই ধরনের ডেটা সংগ্রহ করে, কিন্তু এসব ডেটা চীন সরকারের হাতে পড়তে পারে।
তবে শুরু থেকেই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীনা টেক সংস্থাটি। তাদের দাবি, অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য কখনোই অন্য কাউকে দেয় না। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে তারা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো একইভাবে কাজ করে। তাছাড়া, টিকটক কখনোই চীনা কর্তৃপক্ষের তথ্য আদান-প্রদাণের নির্দেশ মানবে না।
টিকটকের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে- এর পেছনে নিরাপত্তা ইস্যু যেমন রয়েছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক বিরোধের প্রভাবও এখানে স্পষ্ট।
বলা হচ্ছে, টিকটকের বিরুদ্ধে তথ্য পাঁচারের অভিযোগ যতটা উদ্বেগের, তার চেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা হলো এটির সৃষ্টি চীনে। একই দোষে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে পড়েছে হুয়াওয়েই, জেডটিইসহ অন্যান্য চীনভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
ওয়াশিংটনের দাবি, টিকটকের সংগৃহীত তথ্য গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন নাগরিক কিংবা প্রতিষ্ঠানের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি বা অপপ্রচারে ব্যবহৃত হতে পারে। ফলে এরই মধ্যে সরকারী ডিভাইসে এ অ্যাপের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন সরকার।
যেভাবে মার্কিন সরকার নাগরিকদের টিকটক ব্যবহারে বাধা দিতে পারে
সরকারী নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সবচেয়ে সহজ সম্ভাব্য উপায় হবে অ্যাপল ও গুগল দ্বারা পরিচালিত অ্যাপস্টোর থেকে টিকটক সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া। এটি করলে সরাসরি গুগল প্লে-স্টোর কিংবা অ্যাপলের অ্যাপস্টোর থেকে সহজে টিকটক ডাউনলোড করা যাবে না।
তবে যাদের কাছে এরই মধ্যে অ্যাপটি রয়েছে, তাদের ফোনে তো এটি থেকেই যাবে। এ সমস্যা সমাধানে মার্কিন সরকার অ্যাপটির আপডেট প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেবে। এর ফলে একপর্যয়ে ব্যবহারকারীরা অ্যাপটি ব্যবহারে সমস্যার সম্মুখীন হবেন ও একটা সময় এটি ব্যবহারের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
মার্কিন সরকার কি আসলেই নাগরিকদের টিকটক ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে পারবে?
যখন ভারত সরকার টিকটক নিষিদ্ধ করেছিল, তখন এটিকে ডাউনলোড করার সব বৈধ সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপিএস) এটিকে পুরোপুরি ব্লক করে দিয়েছিল বলে জানা যায়। এর ফলে ভারতের বেশিরভাগ আইএসপি থেকে টিকটক অ্যাপে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে এরপরও টিকটকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি ভারত। অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করে এ অ্যাপে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং টিকটক বন্ধে এসব পদক্ষেপ যথেষ্ট নাও হতে পারে।
টিকটক সিম কার্ড ও আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে আমাদের আনুমানিক অবস্থানসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। যদি কোনো সিম কার্ডের নম্বর +১ দিয়ে শুরু হয়, তার মানে ব্যবহারকারী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
এখন কোনো দেশ যদি নাগরিকদের অবস্থান যাচাই করে ডিভাইস থেকে টিকটক ব্লক করে দিতে পারে, তাহলে অ্যাপটিকে পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব। তবে, এ ধরনের নজরদারি ব্যয়বহুল ও বেশ জটিল হওয়ায় অধিকাংশ দেশ এ পদ্ধতি অবলম্বনে অনাগ্রহী হবেন বলে দাবি অনেকের।
চীন এ বিষয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর ও বেআইনিভাবে টিকটক দমনের অভিযোগ তুলেছে চীন। তাছাড়া মার্কিন প্রশাসন সরকারী ডিভাইস থেকে টিকটক সরিয়ে ফেলতে জোর করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি যে নিজের সম্পর্কে কতটা অনিশ্চিত, তা তাদের টিকটক ভীতি দেখেই বোঝা যায়।
টিকটক অ্যাপটি চীনা সংস্থা বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন অন্যতম জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম যা বিশ্বব্যাপী তরুণদের মধ্যে ভিডিও তৈরি ও শেয়ার করার ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়। প্রায় ১৫০টি দেশে প্রায় ১৫০ কোটি টিকটিক ব্যবহারকারী রয়েছে। এছাড়া অ্যাপটি বিশ্বব্যাপী অন্তত ২৬০ কোটি বার ডাউনলোড হয়েছে।
কিন্তু বহুল ব্যবহৃত এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে চীনা সরকারের কাছে হস্তান্তর করার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ তুলে এরই মধ্যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপীয় কমিশন অ্যাপটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি, ২০২০ সালে ভারত অ্যাপটিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছিল।