চীনকে ঠেকাতে জাপানের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা

ফানাম নিউজ
  ২৩ মার্চ ২০২৩, ০১:০৫

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত ও অবাধ রাখতে নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। শিল্প থেকে শুরু করে দুর্যোগ প্রতিরোধ– সবকিছুতে এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে সাহায্যের জন্য তিনি ৭৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই দিনের ভারত সফরে গিয়ে গত সোমবার নয়াদিল্লিতে এই পরিকল্পনা ঘোষণা করেন কিশিদা। তাঁর এই পরিকল্পনাকে চীনের ক্রমবর্ধমান ‘জবরদস্ত আচরণ’ মোকাবিলায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপনে টোকিওর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের

কিশিদা বলেছেন, জাপানের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নতুন পরিকল্পনার চারটি স্তম্ভ রয়েছে। এই অঞ্চলকে মুক্ত ও অবাধ রাখতে সেই চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। সেগুলো হলো– শান্তি রক্ষা, এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো এবং সমুদ্র ও আকাশপথ মুক্ত ও অবাধ রাখা। এই লক্ষ্যে জাপান ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এ সহায়তা বেসরকারি বিনিয়োগ এবং ইয়েন ঋণের মাধ্যমে দেওয়া হবে।

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে চীন। এ ছাড়া ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ এর প্রচারের সময় নৌবাহিনীকে দ্রুত আধুনিকীকরণ করেছে দেশটি। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় দেশ ভারত, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত জোট ‘কোয়াড’ নিয়ে চীন কিছুটা শঙ্কিত। কারণ, চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। এদিকে এই চার দেশ চলতি বছরে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরের নিকটবর্তী সমুদ্র উপকূলে ‘মালাবার’ নামে নৌ মহড়ায় অংশ নেবে। প্রভাবশালী চীনের মোকাবিলায় ভারত ও জাপান প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত বিষয়ে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর করেছে।

ভারত সফরে সমুদ্র প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির দিকে নজর রেখে সমমনা দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন কিশিদা।

তিনি জানান, জাপান ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সামুদ্রিক মহড়া চালাবে। এ ছাড়া আসিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া হবে। নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করার জন্য নয়াদিল্লিকে কেন বেছে নিলেন– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কিশিদা বলেন, মুক্ত ও ভারত-মহাসাগরীয় দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে ভারত একটি অপরিহার্য অংশীদার।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত-জাপান শক্তিশালী করার অংশীদারিত্ব কেবল দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি ভারত-মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অংশ।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দুই দেশের অবস্থান ভিন্ন। অনেক দেশের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জাপান। তবে ভারত এই সংঘাতের জন্য মস্কোকে দোষারোপ করতে চায় না। এ ছাড়া রাশিয়া থেকে তেল কেনা আরও বাড়িয়েছে ভারত। মোদির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কিশিদা বলেন, তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ থামাতে চান। সেজন্য তথাকথিত ‘গ্লোবাল সাউথ’সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতি দেখানো জরুরি।