শিরোনাম
দু’জন দুই জেলের বাসিন্দা। কেউ মুখে স্বীকার করেননি, তবু সবাই জানে, তারা একে অপরের ‘ঘনিষ্ঠ’। কিন্তু মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) আদালতে বিচার চলাকালে যা দেখা গেলো, তাতে ‘ঘনিষ্ঠতা’ আর ঢেকে রাখার উপায় নেই। বলা যেতে পারে, তারা রাখতেও চাননি। এদিন মুখে কথা না হলেও ইশারাতেই বুঝিয়ে দিলেন, ‘টুরু লাভ’ কাকে বলে!
বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদ পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার কথিত প্রেমিকা অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কথা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কারাগারে রয়েছেন দুজনে। মঙ্গলবার দুপুরে ব্যাংকশাল কোর্টে শুরু হয়েছিল মামলার শুনানি। এতে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ভার্চুয়াল শুনানিতে যোগ দেন পার্থ। আর আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে যোগ দেন অর্পিতা।
সময় তখন ঠিক দুপুর ২টা ৫০ মিনিট। আদালতের স্ক্রিনে দেখা যায় পার্থ ও অর্পিতাকে। অডিও বন্ধই ছিল। যে যখন কথা বলেন, তখন তার ক্যামেরার অডিও অন করা হয়। তবে ভিডিও সব সময়ই চালু ছিল। সেই সুযোগে কে দেখলো কীভাবলো তার তোয়াক্কা না করেই ইশারায় পাক্কা ৪০ মিনিট কথা বলেন পার্থ ও অর্পিতা।
প্রথম দর্শনেই একে অপরকে দেখে মুচকি হাসেন। ইশারায় একে অন্যকে যেন প্রশ্ন করেন, ‘কী খবর প্রিয়?’ কুশল বিনিময় হয় চোখে চোখেই। দু’জনেই জানান, ভালোই(!) আছেন। একটু পরে পার্থ ইশারায় জানতে চান, অর্পিতা, খেয়েছো তো? ঘাড় নেড়ে একই প্রশ্ন করেন অর্পিতা। দু’জনেরই ঠোটে লেগে হাসি। অনেকদিন পরে প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হওয়ার হাসি। এসময় অর্পিতা জানতে চান, পার্থ কিছু শুনতে পাচ্ছেন কি না। একই প্রশ্ন আসে ওদিক থেকেও। দু’জনেই জানান ‘না’। সবটাই চলছিল চোখ আর হাতের ইশারায়।
এর পরেই সেই নাটকীয় মুহূর্ত! পার্থ জিভকেটে ভ্যাঙান অর্পিতার দিকে তাকিয়ে। হেসে গড়িয়ে পড়তে পড়তেই অর্পিতার আবার ইঙ্গিতে প্রশ্ন, খাওয়া হয়েছে কি না। এবার আর আগের মতো জবাব না দিয়ে হাত দিয়ে ‘হার্ট সাইন’ দেখান পার্থ। আর তা দেখে আবারও হাসিতে গড়িয়ে পড়ার অবস্থা অর্পিতার।
এবার নাটকের দ্বিতীয় পর্ব। মঙ্গলবার পার্থর পরনে ছিল নীল রঙের ফতুয়া। পার্থ নিজের পরনের ফতুয়াটা দেখাতেই খুশি খুশি মুখ দেখা যায় অর্পিতার। মাথা নেড়ে সেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু কেন? হতে পারে অর্পিতার নীল রং পছন্দ কিংবা ফতুয়াটা তারই উপহার দেওয়া!
এত দূর থেকে কি আর সব কথা বলা যায়! ইশারায় তো সব প্রশ্ন করাও যায় না। কিন্তু টুকিটাকি খোঁজ তো নেওয়া যায়। সেভাবেই ইশারায় অর্পিতার ফের প্রশ্ন, পার্থর চা খাওয়া হয়েছে কি না। ঘড়িতে তখন ৩টা বেজে ১০ মিনিট। চায়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পার্থ নিজের বুকের বাঁ দিকে আঙুল দিয়ে কী যেন লেখেন। কেউ না বুঝলেও সেই ইঙ্গিত অর্পিতা হয়তো ঠিকই বুঝেছিলেন! হাসতে থাকেন দু’জনেই।
আচমকা প্রেমালাপে ব্যাঘাত। ৩টা ১২ মিনিটের দিকে পার্থের স্ক্রিনের নেট যোগাযোগ চলে যায়। অর্পিতা তখন দৃশ্যত অন্ধকার স্ক্রিনে পার্থকে খুঁজছেন। সামনে এগিয়েও আসেন। যে-ই না ফের পার্থকে দেখা গেছে, সঙ্গে সঙ্গে এক মুখ হাসি, সঙ্গে স্বস্তির আভাস।
৩টা ১৭ মিনিট। চুলের গোছা পিঠ থেকে টেনে সামনে আনেন অর্পিতা। পার্থর কি এমনটাই ভাল লাগে? কে জানে! তবে নিজের চুলটা গুছিয়ে রেখেই পার্থের গোঁফটা বেশ সুন্দর হয়েছে বলে ইশারা করেন অর্পিতা। কিন্তু তারপরে ফের নিভে যায় পার্থের স্ক্রিনের আলো। অর্পিতার মুখের আলোও যেন নিভে যায় ঝুপ করে।
পার্থের স্ক্রিন আর অর্পিতার মুখে আলো ফেলে ৩টা ২২ মিনিট নাগাদ। কেন এমন হচ্ছে? জানতে চান অর্পিতা। হাসিমুখে পার্থের জবাব, চা খাচ্ছিলাম।
এরপরেই ক্লাইম্যাক্স। অর্পিতা নিজের ঠোটে হাত রেখে কিছু কি চাইলেন? আর পার্থ কপট রাগ দেখিয়ে নিজের মাথার ওপর হাত ঘুরিয়ে ইশারায় যেন বলেন, মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে?
সেই মুহূর্তে কথা বলতে শুরু করেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। ঠিক যেন, ‘কাবাব মে হাড্ডি’। থেমে যায় অর্পিতা-পার্থর কথা (মানে ইশারা)। দু’জনেই মন দেন শুনানিতে। ৩টা ৩০ মিনিটে শেষ হয় টানা ৪০ মিনিটের শুনানি। প্রেমিক যুগলের দেখা-সাক্ষাৎও শেষ। যেতে যেতেই পার্থ ‘থামস আপ’ দেখান অর্পিতাকে। আর অর্পিতা? ইশারায় কিছু লিখতে বললেন। কী বললেন? হয়তো বলেছেন, পৌঁছে চিঠি দিও?