শিরোনাম
টানা তৃতীয়বারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন শি জিনপিং। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এবার তিনি চীনের সামরিক বাহিনীকে ‘ইস্পাতের মহাপ্রাচীর’ হিসেবে গড়ে তোলার শপথ দিয়েছেন। পাশাপাশি নিজ দেশের আন্তর্জাতিক স্বার্থ রক্ষা, দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৩ মার্চ) চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে দেওয়া সমাপনী বক্তব্যে এসব প্রতিশ্রুতি দেন শি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, সম্প্রতি শি জিনপিংকে চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী নেতাদের একজন হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে করোনা পরবর্তীকালে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির মতো জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।
সোমবার পার্লামেন্টে ৩ হাজার প্রতিনিধির সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে শি জিনপিং বলেন, নিরাপত্তা হলো উন্নয়নের ভিত্তি ও স্থিতিশীলতা হলো সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে নতুন ‘জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ ও ‘উন্নত সামাজিক শাসনব্যবস্থা’ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চীনের সামরিক বাহিনী বিশাল আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ হলে কার্যকরভাবে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তখন ‘ইস্পাতের মহাপ্রাচীর’ হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন বলছে, গত বছরের অক্টোবরে কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে শি’র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে তিনি অন্তত ৯১ বার ‘নিরাপত্তা’ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসির সহযোগী অধ্যাপক আলফ্রেড মুলুয়ান উ বলেন, চীনের দলীয় রাজনীতিতে ‘নেতার নিজের নিরাপত্তা’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর একমাত্র শি’র সমর্থকরাই তার অবস্থান রক্ষা করতে পারেন।
‘সমর্থকরা যদি চান, তাহলে তিনি আজীবন দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা শব্দটি শি’র কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
মুলুয়ান উ আরও বলেন, বাহ্যিকভাবে দেখা যাচ্ছে, শি এমন একটি ছবি আঁকার চেষ্টা করছেন, যাতে তার লোকেরা ভাবতে থাকেন, একমাত্র তিনিই (শি) চীনকে রক্ষা করতে পারেন। তাই শি অনেক নথি ও বক্তৃতায় বারবার যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন মুলুকের মিত্রদের হুমকির বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। তিনি বোঝাতে চান, চীন এখন খুব জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে ও সামনে কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে।
আল-জাজিরা বলছে, চীন এরই মধ্যে তার শক্তিশালী পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সামরিক ঘাঁটি স্থাপন ও দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপ নির্মাণের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। তাছাড়া কম্বোডিয়া থেকে মাইক্রোনেশিয়া পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব রাখছে।
সূত্র: আল-জাজিরা