শিরোনাম
ভাবুন তো, তীব্র তুষারপাতের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন আপনি। হঠাৎ গাড়ি অকেজো হয়ে, আটকা পড়লেন জনমানব শূন্য কোনো রাস্তায়। আশেপাশের শত মাইলের মধ্যে নেই কোনো বাড়ি-ঘর বা দোকান-পাট। কাছে নেই পর্যাপ্ত খাবার, কাজ করে না মোবাইল নেটওয়ার্কও। এদিকে, তুষারে ঢেকে আপনার গাড়ি চোখে পড়ারও উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে গাড়ির মধ্যে শুয়ে-বসে মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন আপনি। কিন্তু হঠাৎ করেই একদল মানুষ এসে আপনাকে উদ্ধার করলো।
কোনো সিনেমার কাহিনী মনে হচ্ছে, তাই না? না যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের জেরি জুরেট (৮১) নামের এক বৃদ্ধের সঙ্গে এমনটিই ঘটেছে।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, জেরি একজন গণিতবিদ ও নাসার সাবেক কর্মকর্তা। বসবাস করেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিগ পাইনের একটি পাহাড়ি বাড়িতে। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে নেভাডার গার্ডনারভিলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
জানা যায়, আবহাওয়া ভালো থাকলে গাড়ি চালিয়ে নেভাডায় পৌঁছাতে মাত্র তিন ঘণ্টা লাগে। কিন্তু সেদিন রওনা দেওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যেই তুষার ঝড়ের কবলে পড়েন জেরি। একপর্যায়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি সরু পথের ধারে স্নোব্যাংকে (জমাট বাঁধা তুষার) আটকা পড়েন।
চারপাশে হিমশীতল তুষার আর পাহাড়, জনমানবের কোনো চিহ্নমাত্র নেই। এমন পরিস্থিতিতে গাড়ির মধ্যে প্রায় এক সপ্তাহ আটকে থাকেন জেরি। টানা ছয়দিন সঙ্গে থাকা চকলেট, স্ন্যাকস ও বিস্কুট খেয়ে বেঁচে ছিলেন তিনি।
হিমশীতল রাতগুলোতে উষ্ণতার জন্য জেরির কাছে উইন্ডব্রেকার ও একটি তোয়ালে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাই ইঞ্জিন চালু রাখার মতো ন্যূনতম গ্যাস ও ব্যাটারি ব্যবহার করে তিনি গাড়ির ভেতরে অবস্থান করেন। পানি পিপাসা লাগলে গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে তুষার খেয়ে নিতেন।
জেরির নাতি ক্রিশ্চিয়ান সিসিএনএনকে বলেন, দাদার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় দিন ব্যাটারি ফুরিয়ে যাওয়ায় গাড়ির বৈদ্যুতিক জানালা আর লাগানো যায়নি। ফলে গাড়ির মধ্যে প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস ও তুষার ঢুকতে শুরু করে।
‘চতুর্থ দিন ইনয়ো কাউন্টি শেরিফের অফিসে আমার দাদার সন্ধান চেয়ে আবেদন জানানো হয়। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকায় উদ্ধারকারী দল তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান শুরু করতে ব্যর্থ হয়। আটকা পড়ার ষষ্ঠ দিন দাদার মোবাইল ফোন থেকে একটি ম্যাসেজ পায় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ। পরে অভিযান চালিয়ে তাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।’
ক্যালিফোর্নিয়া হাইওয়ে প্যাট্রোল বিমান জেরির গাড়িটিকে প্রায় তিন ফুট তুষারে নিচে চাপা পড়া অবস্থায় দেখতে পায়। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে কয়েকঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় তাকে। তবে তার শরীরে হাইপোথার্মিয়ার কোনো লক্ষণ ধরা পড়েনি।
জেরির নাতি আরও বলেন, এমন ভারি তুষারের মধ্যে টানা আটকা পড়ে কীভাবে তিনি ছয় দিন বেঁচে ছিলেন, তা শুনে আমরা ও হাসপাতালের নার্সরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ থাকলেও, ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতা সহজে ভুলতে পারছেন না।
সূত্র: এনডিটিভি