মহার্ঘভাতা দাবিতে পশ্চিমবঙ্গে চলছে প্রশাসনিক ধর্মঘট

ফানাম নিউজ
  ১১ মার্চ ২০২৩, ১৪:২১

কেন্দ্রীয় হারে ও বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে সরকারী কর্মীদের ২৪ ঘণ্টার এ প্রশাসনিক ধর্মঘট শুরু হয়। এতে সমর্থন জানিয়েছে বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি। জরুরি পরিষেবা ছাড়া রাজ্য সরকারি প্রশাসনিক দপ্তর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৫৫টি সরকারি কর্মচারী সংগঠনের ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’। 

এদিকে ধর্মঘট পালনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন কাটা ও সার্ভিস রুল ব্রেকের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও অনড় সরকারি কর্মীরা। 

বৃহস্পতিবার রাতে ব্যানার-পোস্টার হাতে বিক্ষোভে সামিল হন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে বিক্ষোভ করে ‘এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’। কোনও বিভাগ খোলেনি। এ দিকে বিকাশ ভবন ও কলকাতা পৌরসভায় পিকেটিং করার সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। অবশ্য কিছু কর্মচারী কাজ যোগ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। তাদের আইডি কার্ড দেখিয়ে মহাকরণ, বিকাশ ভবনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। যদিও কর্মচারীদের ভিড় তেমন দেখা যায়নি। 

এছাড়া যোগমায়া দেবী কলেজ, সিটি কলেজ, আশুতোষ কলেজ, মতিঝিল কলেজে সকাল থেকেই ক্লাস বন্ধ। শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও ক্লাস নেবেন না বলে জানিয়েছেন। 

রাজ্য জুড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা হাজির হলেও পাঠ দান বন্ধ অধিকাংশে। ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে ফেরিঘাটেও। সকাল থেকে বন্ধ ফেরি চলাচল। অনেকেই ফেরি না পেয়ে ফিরে গেছেন। সরকারি বাস ডিপোতেও ধর্মঘটের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি বাসের সংখ্যা অন্যদিনের তুলনায় কম।

এর আগে ধর্মঘট রুখতে বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয়ের নবান্নের তরফের নির্দেশিকা জারি করা হয়। তখন বলা হয়, শুক্রবার কাজে অনুপস্থিত থাকলে বেতন কাটার পাশাপাশি চাকরি জীবন থেকে কমবে একটা দিন। ১০ মার্চ কোনো রাজ্য সরকারি কর্মীর ক্যাজুয়াল লিভ, প্রথমার্ধে বা দ্বিতীয়ার্ধে হাফ ডে বা দিনের জন্য ছুটির আবেদন অনুমোদন করা হবে না। সবাইকে অফিসে উপস্থিত থাকতেই হবে। 

পাল্টা রাজ্যের অর্থসচিব মনোজ পন্থকে চিঠি দিয়ে যৌথ মঞ্চের আইনজীবী প্রবীর চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই নির্দেশিকা বেআইনি। সরকারের এই চোঙরাঙানিকে ভয় পান না বলেই জানিয়ে দেন সরকারি কর্মীরা। 

সংগঠনের নেতা ভাস্কর ঘোষ বলেন, বৃহস্পতিবার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। 

ধর্মঘটের বিষয়ে বিজেপির সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষ বলেন, সব রাজ্য যখন দিচ্ছে, তখন বকেয়া ডিএ রাজ্য সরকারকেও দিতে হবে। ছুটি দিয়ে ডিএ পোষানো যায় না। 

যদিও মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আর ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। চলতি সপ্তাহে তিনি বিধানসভায় বলেন, ‘আমার মুণ্ডু কেটে নিলেও আর দিতে পারব না।’

রাজ্য সরকার ও সরকারি কর্মচারীদের সংঘাতের মধ্যে আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মীদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। 

রাজ্যপাল বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে ডিএ নিয়ে যে অনশন চলছে, তাতে অসুস্থ হয়ে পড়বেন সরকারি কর্মীরা। মানুষের পরিষেবা ব্যাহত হবে। আশা করি, সবাই বসে খুব দ্রুত এর সমাধান করা যাবে।

পাশাপাশি ২৯ দিন ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে আন্দোলনকারীদের একাংশ।