শিরোনাম
কয়েক মাস ধরে তুমুল লড়াইয়ের মধ্যেই ইউক্রেনের পূর্ব বাখমুত দখলের দাবি করেছে রুশ সশস্ত্র ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনার গ্রুপ। দলটির প্রধান ও ক্রেমলিনের মিত্র ইয়েভজেনি প্রিগোজিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, তাঁর বাহিনী শিল্প শহরটির পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। লবণ খনির এ শহরে যুদ্ধের আগে ৮০ হাজার মানুষের বাস ছিল। তবে দু’পক্ষের যুদ্ধের কারণে শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ওয়াগনার গ্রুপের এ দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য জানায়নি কিয়েভ। আবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও ওয়াগনারের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। এর আগে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করেন, বাখমুতের পতন হলে মস্কোর সৈন্যরা দেশের গভীরে প্রবেশ করার উন্মুক্ত রাস্তা পেয়ে যাবে। খবর আলজাজিরার।
ইউক্রেনে ক্রেমলিনের আক্রমণ এক বছর পার হয়েছে। তবে কোনো একটি শহর দখলে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে বাখমুতে। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাখমুত রুশ বাহিনীর হাতে পড়লে কী হতে পারে তা নিয়ে সতর্ক করেছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারি যে বাখমুতের পরে রুশ বাহিনী আরও এগিয়ে যেতে পারে। তারা দোনেৎস্ক অঞ্চলের কাছাকাছি শহরগুলোয় আক্রমণ করতে পারে। তারা ক্রামাতোরস্কে ও স্লোভিয়ানস্কে যেতে পারে। অর্থাৎ বাখমুতের মাধ্যমে রুশ সৈন্যদের সামনে একটি খোলা রাস্তা তৈরি হবে।
এক দিন আগেই বাখমুতে আক্রমণের নেতৃত্ব দেওয়া ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোজিন অনুমান করেছিলেন, শরহটি রক্ষায় এখনও ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্য রয়েছে। কয়েকদিন আগে প্রিগোজিনের সঙ্গে রুশ সামরিক নেতৃত্বের বিরোধের বিষয়টিও সামনে এসেছিল।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু মঙ্গলবার এক বৈঠকে সামরিক কর্মকর্তাদের বলেছেন, বাখমুতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে পূর্ব ইউক্রেনে আরও আক্রমাত্মক অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে।
সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা, বাখমুতে বেশ চাপে রয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবুও সেনারা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, অবশ্যই আমাদের সৈন্যদের জীবন নিয়ে ভাবতে হবে। তবে যখন আমরা অস্ত্র সরবরাহ পাচ্ছি এবং আমাদের সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণ চালানোর সক্ষমতা রয়েছে, তখন আমরা আমাদের কাজ চলিয়ে যাব।
এদিকে গতকাল নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে– মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন গোয়েন্দা তথ্যে ইঙ্গিত পেয়েছেন, গত বছর নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে নাশকতার পেছনে ইউক্রেনপন্থি গ্রুপ জড়িত। যদিও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ এমন তথ্য অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াসও প্রমাণ ছাড়া ইউক্রেনকে দায়ী করা নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের আগে নিশ্চিত হতে হবে যে, পাইপলাইনে হামলায় ইউক্রেনীয় গোষ্ঠী জড়িত কিনা, এটি ইউক্রেনীয় আদেশে ঘটেছে কিনা কিংবা সরকারের অজান্তেই ইউক্রেনীয় সমর্থক গোষ্ঠী এমনটা করেছে কিনা।
এদিকে তাইওয়ান নিয়ে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন অস্ত্রের বিরুদ্ধে সক্ষমতা অর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনে রুশ হামলা নিয়ে অধ্যয়নরত চীনা সামরিক গবেষকরা। তাদের মতে, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্টারলিং স্যাটেলাইটগুলোকে গুলি করা এবং কাঁধ থেকে চালিত জ্যাভলিন ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের ট্যাঙ্ক ও হেলিকপ্টার রক্ষা করার সক্ষমতা প্রয়োজন। এটিকে সম্ভাব্য তাইওয়ান আক্রমণে চীনা বাহিনীর বিরুদ্ধে মোতায়েন করা মার্কিন অস্ত্র ও প্রযুক্তির প্রভাব যাচাই করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রয়টার্সের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শত শত চীনা গবেষক রুশ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ এবং পশ্চিমা সমরাস্ত্র নিয়ে গবেষণা করছেন।