শিরোনাম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালেই গত বছর সেপ্টেম্বরে একটি গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটেছিল- কিন্তু কে বা কারা এ ঘটনা ঘটায় তা এক রহস্য হয়েই ছিল এতদিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে- সম্ভবত ইউক্রেন-সমর্থক একটি গ্রুপ ওই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।
বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস নিয়ে যাওয়ার পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম-ওয়ানের ওপর চালানো হয়েছিল ওই আক্রমণটি। সে সময় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল এ ঘটনা।
২৬ সেপ্টেম্বর সাগরের নিচে চারটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের ফলে পাইপলাইনটির অন্তত ১৬৪ ফুট দীর্ঘ একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় এর পাশেই থাকা আরেকটি নতুন পাইপলাইন- যার নাম নর্ড স্ট্রিম-টু। কয়েক দশক ধরেই রাশিয়া জার্মানিসহ বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশে গ্যাস সরবরাহ করছে। তবে বিস্ফোরণটি যখন ঘটে তার বেশ কিছুদিন আগেই রাশিয়া ‘রক্ষণাবেক্ষণ কাজের’ কারণ দেখিয়ে নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইনটি দিয়ে গ্যাস পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। আর নর্ড স্ট্রিম-টু দিয়ে গ্যাস পাঠানো কখনও শুরুই হয়নি।
জার্মানি, ডেনমার্ক এবং সুইডেন– তিনটি দেশ এ ঘটনার তদন্ত করছিল। এ বিস্ফোরণের কারণ এখনও অজানা, তবে এটিকে একটি আক্রমণের ঘটনা বলেই সন্দেহ করা হচ্ছিল। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম অমীমাংসিত রহস্যময় ঘটনা ছিল এটি।
নিউইয়র্ক টাইমসের অনুসন্ধানী সাংবাদিক অ্যাডাম এনটুস, জুলিয়ান বার্নস এবং অ্যাডাম গোল্ডম্যানের রিপোর্টে বলা হয়েছে, নতুন পাওয়া কিছু মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে আক্রমণটির পরিকল্পনা হয়তো করা হয়েছিল অভিজ্ঞ কিছু ডুবুরির সহায়তা নিয়ে।
নাম প্রকাশ-না-করা মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রমণটি যারা চালিয়েছে তারা কারা এবং কোন পক্ষের সে সম্পর্কে তারা অনেক কিছুই জানেন না। গোয়েন্দা তথ্যগুলো থেকে আভাস পাওয়া যায় যে তারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধী, কিন্তু তারা ঠিক কোন গোষ্ঠীর - বা এই অপারেশনের পরিচালনা এবং খরচের যোগান কে দিয়েছে - তাও নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
তারা ছিল এমন কেউ যারা দৃশ্যতঃ কোনো সামরিক বা গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে কাজ করছে না– বলছেন এমন কিছু মার্কিন কর্মকর্তা, যারা গোয়েন্দা তথ্যগুলো পর্যালোচনা করেছেন। তবে যারা এ কাজ করেছে তারা হয়তো অতীতে বিশেষ ধরনের সরকারি প্রশিক্ষণ পেয়েছে– এমনটি হতে পারে। মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যগুলো কী ধরনের, কীভাবে পাওয়া গেছে, তথ্যপ্রমাণগুলো কতটা জোরালো- এগুলো জানাতে অস্বীকার করেছেন। তারা এটাও বলেছেন যে এগুলো থেকে কোন 'সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসা যায় না।'
নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকেরা বলছেন, এর ফলে এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না যে- ইউক্রেন সরকার বা তাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংযোগ আছে এমন কোন ‘প্রক্সি বাহিনী’ এই অপারেশন চালিয়েছে- যেটা কোথাও কাগজে-কলমে লেখা নেই।
গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনাকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, অন্তর্ঘাতীরা খুব সম্ভবত ইউক্রেনীয় বা রুশ নাগিরিক, অথবা হয়তো তাদের মধ্যে দু'দেশের লোকই রয়েছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, কোন আমেরিকান বা ব্রিটিশ নাগরিক এতে জড়িত ছিল না। সূত্র: বিবিসি