বিতর্কের মধ্যেই সমাবর্তনে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ফানাম নিউজ
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:৪০

সমাবর্তনের আগেই ‘উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দূর হঠো’, ‘ভিসি, গো-ব্যাক’ লেখা পোস্টারে ছেয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি, ডাক আসে সমাবর্তন বয়কটেরও। তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়। নিরাপত্তার কঠোরতা এতই বেশি ছিল যে, সাবেক শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তা নিয়েই নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে ঝামেলার শুরু।

শেষমেশ সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যাগ ও মোবাইল রেখে অনুষ্ঠানে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। অথচ, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হন বোলপুর শান্তিনিকেতনের বিজেপি নেতা-কর্মীরা। তা দেখেই বিশ্বভারতীর প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও প্রবীণ আশ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আমন্ত্রিত অতিথিদের এভাবে বরণ করতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশ্বভারতীর সাবেক শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, শান্তিনিকেতনে উত্তেজনা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থেকেই। দু’দিনের সফরে বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে যান প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সন্ধ্যায় বিশ্বভারতীর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে সঙ্গীতভবনের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিবেশিত ‘ভানুসিংহের পদাবলী’ নাটকটি দেখেন তিনি।

তবে বিশ্বভারতীর ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ঠিক করেছিল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী যখন নাটক দেখবেন, তখন কিছুটা দূরেেই শান্তিনিকেতনের রতনপল্লীতে বিবিসি নির্মিত তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ দেখানো হবে।

একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই বিশ্বভারতীর আচার্য। অন্যদিকে, একসঙ্গে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপস্থিতিতে, বিবিসির ওই তথ্যচিত্র প্রদর্শনের সিদ্ধান্তে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য প্রশাসনে। অবশেষে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের মাধ্যমে  তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জানা যায়, সম্প্রতি জমিসংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তছাড়া বিদ্যুত চক্রবর্তী প্রবীণ আশ্রমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ‘বুড়ো খোকা’ আবার কখনো ‘মাটি চোর‘ ও ‘অশিক্ষিত’ বলে মন্তব্য করেন। মূলত এসব বিষয় নিয়েই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

শুক্রবার নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় বিশ্বভারতীর সমাবর্তন। এদিন প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, সচারচর এ ধরনের অনুষ্ঠান থেকে আমি দিনের দিনই ফিরে যাই। কিন্তু বিশ্বভারতী ও গুরুদেবকে জানবো বলে একদিন অতিরিক্ত রেখেছি। অবশ্য আমি জানি, দুই-একদিনে বিশ্বভারতী বা গুরুদেবকে জানা সম্ভব নয়।’

বিশ্বভারতী তীর্থের থেকে কোনো অংশে কম নয়। পশ্চিমবঙ্গের একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান যদি গঙ্গা হয়, তবে শিক্ষার তীর্থস্থান হলো বিশ্বভারতী। তফাৎ হলো, গঙ্গার জল সাগরে মিশে যায় আর বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞান নিয়ে গঙ্গার মতোই বহু দূরে ছড়িয়ে যান। মানুষকে আলোকিত করেন।

এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার, বিজেপি সংসদ সদস্য ও অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে।