শিরোনাম
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকেই চলেছে হামলা-পাল্টা হামলা। দেখা গেছে, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। মনে করা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই সবচেয়ে বড় সংঘাত। এরই মধ্যে লাখ লাখ নাগরিক ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। বাস্তুচ্যুতির সংখ্যাও কম নয়। এত দিন পরও মনে হচ্ছে এই যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই।
এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে আমদানিনির্ভর দেশগুলো। কারণ জ্বালানি রপ্তানিতে যেমন রাশিয়া শীর্ষে রয়েছে, তেমনি খাদ্য রপ্তানিতে ছিল ইউক্রেনের অন্যতম অবদান। ইউক্রেনের শস্যের ওপর বিশ্বের অনেক দেশ নির্ভরশীল। তাই দেশ দুটির এমন যুদ্ধে দেশে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে জ্বালানির ক্ষেত্রে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে আকাশচুম্বী। তৃতীয় বিশ্বে সংকট আরও গভীর।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বেশ কয়েক মাস ধরেই জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা চলে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে ইউরোপের দেশগুলো। কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইউরোপে জ্বালানির সরবরাহ কমিয়ে দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বন্ধ রাখা হয় সরবরাহ। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে চাপ বাড়ে। কারণ ইউরোপের দেশগুলো নজর দেয় মধ্যপ্রাচ্যে। বেড়ে যায় চাপ। যদিও এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারে নেমেছে। কিন্তু অস্থিরতা কাটেনি। একই অবস্থা রয়েছে এলএনজির ক্ষেত্রেও। এতে বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে।
ইউরোপের কিছু দেশে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করে। বেড়ে যায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। এ কারণে ইউরোপের সমৃদ্ধশালী দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানিসহ বেশ কিছু দেশে আন্দোলন হয়েছে। এখনো অঞ্চলটির অনেক দেশ বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে সরে যেতে হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। শুরু থেকেই দেশটি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। যত দিন প্রয়োজন তত দিন এই সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু মার্কিন বাজারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে হু হু করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিম্ন আয়ের মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গত বছর দেশটিতে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ৯ শতাংশ ছাড়ায়। এ বছর সেখানে ডিমের দাম গত বছরের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি। মন্দারও সাক্ষী হয়েছে দেশটি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। বাড়িয়ে চলেছে সুদের হার। দেশটির এই নীতি বিশ্বের অনেক দেশই অনুসরণ করছে। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি এই যুদ্ধে দেশে দেশে একদিকে যেমন বেড়েছে অর্থনৈতিক সংকট তেমনি বেড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। দেউলিয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কা। একই পথের পথিক এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরই পর্যটননির্ভর দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। ছিল বৈদেশিক ঋণের বোঝা। তারপর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয় দেশটি। এখনো সাহায্যের জন্য বিশ্বব্যাংকসহ বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ঘুরছে। কবে দেশটি স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
পাকিস্তানও দেউলিয়া হওয়ার পথে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক আগেই বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে দেশটি বিলাসবহুল পণ্যের আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। জ্বালানির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সবশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আমদানি করারও ডলারও নেই পাকিস্তানের হাতে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নানা সময়ে সন্ত্রাসী হামলায় বিধ্বস্ত পাকিস্তান। আইএমএফের শর্ত মেনে জ্বালানিতে ভর্তুকি উঠিয়ে দিয়েছে দেশটি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।