মন্ত্রী-আমলাদের ভাতা-পরিবহন ব্যয় কমাচ্ছে পাকিস্তান

ফানাম নিউজ
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:৪৩

এবার সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি কার্যালয়কে মোট ব্যয়ের ১৫ শতাংশ সংকোচনের নির্দেশ দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। ‍

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার মন্ত্রী, উপদেষ্টাদের কয়েক মাসের জন্য বেতন না নিতে, বিলাসী গাড়ি ব্যবহার ও বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করতে বলেন। এমনকি আকাশ পথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ইকোনমি ক্লাসের সিট ব্যবহার করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ বলেন, মন্ত্রী, সরকারি উপদেষ্টা ও আমলাদের সব বিলাসবহুল গাড়ি প্রত্যাহার করা হবে। আর কোনো অনিবার্য কারণ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। তবে জরুরি কোনো কারণে যদি বিদেশে যেতে হয় তাহলে বিজনেস ক্লাস নয়, ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সরকার বছরে ২০ হাজার কোটি ডলার সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ সময়ের প্রয়োজনে নেওয়া ও বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব সামান্য সঞ্চয়ও সংকট কাটাতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করতে পারে।

তার দাবি, মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা স্বেচ্ছায় তার এসব পদক্ষেপ মেনে চলতে রাজি হয়েছেন। এমনকি, মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য তাদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা করতে ও সব খরচ কিছুদিনের জন্য নিজেদের পকেট থেকে দিতে সম্মত হয়েছেন।

শাহবাজ আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনীও যুদ্ধবহির্ভূত ব্যয় কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তবে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যয় নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেলনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

ব্যয় সংকোচনের অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, সরকারচালিত যেকোনো সংস্থা বিলাসবহুল দ্রব্য ‍ও যানবাহন কিনতে পারবে না, দুই বছরের জন্য নতুন জেলা বা শহরের মতো কোনো প্রশাসনিক ইউনিট তৈরি করার পরিকল্পনা করা যাবে না।

বেশ কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। তবে সম্প্রতি সে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি ২৭ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণের আবেদন করেছে দেশটি।

পাকিস্তানের জন্য আইএমএফের ঋণ সহায়তার শর্তগুলো ‘কল্পনাতীত’। তবে চরম অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে এই মুহূর্তে সেসব কঠিন শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। কিন্তু দফায় দফায় বৈঠকের পরেও ঋণের শর্ত নিয়ে একমত হতে পারেনি দু’পক্ষ। এর ফলে ঝুলে রয়েছে আইএমএফের ঋণ ছাড়ের বিষয়টি।

আলোচনায় বসার আগে আইএমএফ পাকিস্তানকে পূর্ববর্তী পদক্ষেপ নিতে বলেছিল। যার মধ্যে রয়েছে ভর্তুকি প্রত্যাহার, জ্বালানি শুল্ক বৃদ্ধি, অতিরিক্ত রাজস্ব বাড়ানো এবং বহিরাগত অর্থায়নের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাবো না। শুধু বলবো, আমাদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অকল্পনীয়। আইএমএফের যেসব শর্তে আমাদের রাজি হতে হবে, সেগুলোও কল্পনার বাইরে। তবে শর্তগুলো মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে ৩০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে, যা দিয়ে বড়জোর তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।