বহির্বিশ্বের সহায়তা ‘বিষাক্ত মিছরি’র মতো হতে পারে

ফানাম নিউজ
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:৪৮

বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দাবি, করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে উত্তর কোরিয়ার খাদ্যসংকট তীব্র রূপ ধারণ করেছে দেশটিতে। তবে এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে বহির্বিশ্বের ওপর নির্ভর করতে নারাজ দেশটি।

বুধবার (২২) উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদপত্র রোডং সিনমুনের একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়, বাইরে থেকে খাদ্যসহায়তা নেওয়া ‘বিষাক্ত মিছরি’ গ্রহণের মতো হতে পারে। এর মাধ্যমে অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টা করা ভুল। উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে নিজেদেরই অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে।

প্রতিবেদনটিতে ‘সাম্রাজ্যবাদীদের’ কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। বলা হয়, এ সহায়তা উত্তর কোরিয়াকে ‘লুট ও পরাধীন করার’ ফাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এমনকি, দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পেতে পারে শত্রু দেশগুলো।

সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া দাবি করে, উত্তর কোরিয়ার খাদ্যসংকটের আরও অবনতি ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী ওয়েবসাইট ‘৩৮ নর্থ’ বলেছিল, বিগত কয়েক দশক ধরেই উত্তর কোরিয়া বন্যা ও টাইফুনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত। পাশাপাশি পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার ফলে আরোপ হওয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।

তবে উত্তর কোরিয়ার খাদ্যঘাটতি নিয়ে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। জাতিসংঘভিত্তিক এ সংস্থাটি অতীতে উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করেছে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে উত্তর কোরিয়া দুর্ভিক্ষসহ, প্রায়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরম আবহাওয়ার ফলে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়া ও করোনা মহামারি চলাকালীন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় খাদ্যসংকট আরও বেড়েছে।

জানা যায়, এমন পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করেছে বেশিরভাগ জাতিসংঘ ভিত্তিক সংস্থা ও পশ্চিমা ত্রাণগোষ্ঠী। বর্তমানে দেশটির খাদ্যসহায়তা সরবরাহকারী কয়েকটি উৎসের মধ্যে চীন একটি।

এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ মন্ত্রী কওন ইয়ং-সে বলেছিলেন, পিয়ংইয়ং ডব্লিউএফপিকে সহায়তা দেওয়ার জন্য বলেছিল, কিন্তু পর্যবেক্ষণের বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হওয়ায় সে বিষয়ের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

একত্রীকরণ মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম কৃষি বিষয়ে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের একটি 'জরুরি' বৈঠকে বসার পরিকল্পনার খবর প্রকাশ পায়। ওই বৈঠকের মাধ্যমে পিয়ংইয়ং গুরুতর খাদ্য সংকটের কথা স্বীকার করে নিয়েছে বলে দাবি উত্তর কোরিয়ার। কারণ, উত্তর কোরিয়ার শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে এমন বিশেষ বৈঠক ডাকা খুবই বিরল।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সি জানায়, উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় শহর কাইচনসহ তিনটি গ্রামীণ কারাগারে গত দুই বছরে প্রায় ৭০০ বন্দী দুর্ভিক্ষ ও বিভিন্ন রোগে মারা গেছে।

গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার ডং-এ ইলবো পত্রিকা একটি প্রতিবেদনে বলেছিল, ‍২০০০ সালের পর এবারই প্রথমবারের মতো সৈন্যদের জন্য দৈনিক খাবারের রেশন কমিয়েছে উত্তর কোরিয়া।