শিরোনাম
তুরস্ক-সিরিয়ায় গত সপ্তাহের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এতে কেবল তুরস্কেই মারা গেছেন ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ। তারা অবশ্যই কারাও বাবা, কারও মা, কারও ভাই-বোন। আর স্বচক্ষে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে অগণিত শিশু। ভাগ্যক্রমে হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে গেছে তারা। কিন্তু বিপর্যয়ের ভয়াবহ মানসিক আঘাত আজও ভুলতে পারেনি তারা।
কেমন আছে তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর শিশুরা? এক শিক্ষক জানিয়েছেন, আপাতত ‘ভূমিকম্প, ভূমিকম্প’ খেলে ভয় কাটানোর চেষ্টা করছে বাচ্চারা।
তুরস্কের ইসকেনদেরুন বন্দরে একটি ফেরিকে অস্থায়ী ক্লিনিক ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে ২২টি শিশুর দেখভাল করছেন বুশরা সিভেলেক নামে এক শিক্ষক।
শিশুরা কীভাবে সময় কাটায় জানতে চাইলে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তারা ভূমিকম্পের কথা বলে। তারা ব্লক তৈরি করে বলে... ‘এটা কি ভূমিকম্পের জন্য ঠিক আছে? এটা কি স্থিতিশীল?’
বুশরা জানান, শিশুরা খেলনা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে খেলে আর বলে, ‘আমাদের ভূমিকম্প এলাকায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি’।
তিনি বলেন, প্রথম কয়েকদিন যখনই ফেরি দুলে উঠতো, তখনই শিশুরা ভীত হয়ে পড়তো। তারা ভাবতো, এটিও হয়তো ভূমিকম্প।
একই ফেরিতে কর্মরত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হাসিবে ইব্রু বলেন, মানুষ প্রচুর কান্নাকাটি করছে এবং তারা ঘুমাতে পারছে না।
তিনি বলেন, আমি ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া লোকদের বলছি, তারা যা অনুভব করছেন তা স্বাভাবিক এবং নিরাপদ পরিবেশে এই লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে কমে যাবে। এটি তাদের শান্ত করে। মানুষ স্বস্তিবোধ করে যখন জানতে পারে, তারা আসলেই পাগল হয়ে যাচ্ছে না, তারা ঠিক আছে এবং এটি এমন কিছু যা যেকোনো সাধারণ মানুষ অনুভব করতে পারে। আমরা সারাদিন তাদের পর্যবেক্ষণ করছি।
ইব্রু জানান, দীর্ঘমেয়াদী মানসিক প্রভাবগুলো কেবল সময় গেলেই বোঝা যাবে। কারণ মানুষ বিভিন্নভাবে ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে পারে।
গত সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ৭ দশমিক ৮ ও ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভয়াবহ দুটি ভূমিকম্প এবং এগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ভুক্তভোগীরা যে পরিমাণ আতঙ্কের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন, তা কল্পনাতীত। ধ্বংসস্তূপের নিচে তীব্র ঠান্ডা ও অন্ধকারের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার পর উদ্ধার ভুক্তভোগীরা জেনেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা হয় মারা গেছেন নাহয় নিখোঁজ। তারা দেখেছেন, যে এলাকায় থাকতেন, সেটি পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, প্রতিবেশীদের নাম-নিশানাও নেই। যেদিকেই চোখ যায়, শুধু ধসে পড়া ইট-পাথরের স্তূপ।
চিকিত্সকরা বলেছেন, ভূমিকম্পের পরে তাদের কাছে চিকিৎসার জন্য আসা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার এবং প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।