শিরোনাম
তুরস্ক-সিরিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রভাব ২ কোটিরও বেশি মানুষের ওপর পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অ্যাডেলহেইড মার্শাং বলেন, আমাদের জরিপ দেখাচ্ছে, সম্ভাব্য ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এ ভূমিকম্পের সংস্পর্শে এসেছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ দুর্বল জনসংখ্যা রয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অ্যাডেলহেইড মার্শাং। এসময় উপস্থিত সবাই ভূমিকম্পে হতাহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে বেসামরিক ও স্বাস্থ্য অবকাঠামোগুলোর অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে, তুরস্ক ও উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার অবস্থা খুবেই খারাপ। ডব্লিউএইচও সিরিয়ার সহায়তা চাহিদা তাৎক্ষণিক ও মধ্যমেয়াদী হিসেবে বিবেচনা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি উদ্ধারকারীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, প্রতিকূল আবহওয়ার মধ্যেও তারা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে ভূমিকম্পের ফলে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী সড়গুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় সীমান্ত দিয়ে সহায়তা সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে সংকট আরও বাড়তে পারে।
এদিকে ডব্লিউএইচও’র প্রধান নির্বাহী টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস বলেন, পরিস্থিতি এখন সময়ের বিরুদ্ধে দৌড়ানোর মতো। আমরা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে জরুরিভাবে সহায়তা পাঠাচ্ছি। এরই মধ্যে আমরা জরুরি ত্রাণ সংগ্রহ করছি। তাছাড়া আহত ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ব্যক্তিদের সহায়তায় জরুরি মেডিকেল টিম পাঠিয়েছি।
ডব্লিউএইচও প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার সংস্থা আগামী দিনে তুরস্ক ও সিরিয়ার মানুষদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দুই দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। প্রয়োজন হলে দেশটির স্বাস্থ্য অবকাঠামো পুনরুদ্ধার ও পুনর্নির্মাণেও সাহায্য করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
দুর্যোগ সংস্থাগুলো বলছে, এমনিতেই যুদ্ধ, বিদ্রোহ, শরণার্থী সংকট ও সাম্প্রতিক কলেরা প্রাদুর্ভাবে জর্জরিত সিরিয়া। তার মধ্যে ভয়াবহ এ ভূমিকম্প মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দুর্দশা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে উত্তর সিরিয়ার পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ, কারণ দীর্ঘ কয়েক বছরের যুদ্ধে এ অঞ্চলটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে বলা যায়।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেসময় দেশ দুটির অধিকাংশ মানুষ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য বলছে, তুরস্ক, সিরিয়ার পাশাপাশি সাইপ্রাস, লেবানন, ইসরায়েল, মিশরেও অনুভূত হয়েছে ভূমিকম্পটি। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পনসহ শতাধিক আফটারশক আঘাত হেনেছে ওই অঞ্চলে।
ভূমিকম্পে দুই দেশে নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। ধসে পড়া হাজার হাজার ভবনের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন আরও বহু মানুষ। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।