পি কে হালদার আরও ১২ দিনের কারা হেফাজতে

ফানাম নিউজ
  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:২৩

কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার মামলার আসামি বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারসহ ছয় আসামিকে অতিরিক্ত ১২ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে বা কারা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। 

২২ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ শেষে শনিবার (৪ জানুয়ারি) মামলার আসামিদের আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে স্পেশাল সিবিআই আদালত- ৩ এর বিচারক শুভেন্দু সাহা আসামিদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি তাদের আবারও আদালতে তোলা হবে ও মামলার শুনানি শুরু হবে স্থানীয় সময় দুপুর ১টায়।

শনিবার বেলা ১১টায় আসামিদের আদালতে আনা হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাদের স্পেশাল সিবিআই কোর্ট- ৩ এর বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে তোলা হয়। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে বিচারক মামলার পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করেন।

এদিন মূলত পি কে হালদারের ভাই তথা এ মামলার অন্যতম আসামি প্রাণেশ কুমার হালদারের জামিন আবেদনের শুনানি হয়। প্রাণেশের হয়ে আদালতে ‍যুক্তি-তর্ক খণ্ডন করেন আইনজীবী মিলন মুখার্জি।

শুরুতেই মিলন মুখার্জির দাবি ছিল, প্রাণেশ কুমার হালদার বাংলাদেশের নাগরিক নন। তাছাড়া মামলার প্রধান আসামি পিকে হালদার ও তার ভাই পৃথ্বীশ কুমার হালদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইনে মামলা হলেও, সে দেশে প্রাণেশের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। তাকে ভারতের অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইনে আসামি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া একাধিক তথ্য তুলে ধরে আইনজীবী মিলন মুখার্জি দাবি করেন, প্রাণেশের জামিন আবেদন মঞ্জুর করা যেতেই পারে। যদিও সে জামিনের বিরোধিতা করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, প্রাণেশ প্রত্যক্ষভাবে এ মামলায় জড়িত না থাকলেও, তিনি জেনে শুনে তার ভাই পি কে হালদারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ভারতে সম্পত্তি সৃষ্টি ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন।

এদিন প্রায় এক ঘন্টা ধরে ইংরেজি ভাষায় জামিন আবেদনের শুনানি চলে। যদিও শুনানি চলাকালে বিচারকের হাতে বাংলায় লেখা বাংলাদেশের অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইনের যাবতীয় নথি তুলে দেন প্রাণেশের আইনজীবী মিলন মুখার্জী। বিচারক শুভেন্দু সাহা বলে ওঠেন, বাহ্! সবই তো দেখছি বাংলায় লেখা। এ সময় ভাষার ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে।

বিচারকের হাতে বাংলা ভাষায় আইনি নথি তুলে দেওয়ার বিষয়ে মিলন মুখার্জী বলেন, আদর্শ বাংলা ভাষার চর্চা একমাত্র বাংলাদেশই ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ সংক্রান্ত কোনো মামলায় আইজীবী হতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।

মিলন মুখার্জী আরও বলেন, আমরা প্রাণেশের জামিনের জন্য আবেদন করেছি। তার সপক্ষে সব কাগজপত্র আদালতের হাতে তুলে দিয়েছি। তিনি জামিনের যোগ্য। মামলার গতি-প্রকৃতি নিয়ে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমরা যেসব নথি জমা দিয়েছি, সেগুলো খণ্ডন করার জন্য ইডির তরফ থেকেও নতুন করে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হতে পারে।

ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, আজ মামলার ছয় নম্বর আসামি প্রাণেশ কুমার হালদারের জামিন আবেদনের শুনানি ছিল। দুপক্ষই তাদের মতো করে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেছে। তদন্ত প্রক্রিয়া এখনো চলছে। এরই মধ্যে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের হাতে নতুন তথ্য উঠে এসেছে। ফলে আমাদের পক্ষ থেকে নতুন করে অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়া হতে পারে।

কলকাতার কাছাকাছি অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০২২ সালের ১৪ মে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ইডি। তার সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়, পিকের ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার ও আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারসহ আরও কয়েকজনকে।

গত বছরের ১১ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ইডি। অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন ও দুর্নীতি দমন আইন করা মামলায় ওই ছয় আসামির নামে অভিযোগ গঠন করা হয়। বর্তমানে পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ আসামিকে প্রেসিডেন্সি কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, মামলার একমাত্র নারী আসামিকে রাখা হয়েছে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।