শিরোনাম
সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক ময়দানে জমে উঠেছে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। এর মধ্যে বিশেষভাবে নজর কাড়ছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) কলকাতার বৃহত্তম এ বইমেলায় বাংলাদেশ ও ভারতের দুই বন্ধুর লেখা ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ- দুই বন্ধু এক দেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রেস সচিব রঞ্জন সেন।
বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলসের গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতীয় সেতার বাদক পণ্ডিত রবি শংকরের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজন করা হয় ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। পৃথিবীতে সেবামূলক কনসার্টের ইতিহাসে এটি অনন্য উদাহরণ।
‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ- দুই বন্ধু এক দেশ’ বইয়ে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ভয়াবহ নৃশংসতার পাশাপাশি বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে। এর রচয়িতা আবু সাঈদ ও প্রিয়জিৎ দেবসরকার।
বইটির মোড়ক উন্মোচন করতে গিয়ে রঞ্জন সেন বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অবস্থা আজ বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু এ ধরনের বই বা লেখালেখি থেকে তরুণ প্রজন্ম ওই সময় কী ঘটেছিল সে ব্যাপারে কিছুটা ধারণা পাবে। নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, সে সম্পর্কে যখন কেউ বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবে, তখন এই বই অন্যতম সম্পদ হবে।
তিনি বলেন, তখনকার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞে লাখ লাখ নারী-শিশু নিহত হয়েছিলেন। বহু নারী সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন। এই বিষয়গুলো পশ্চিমা গণমাধ্যমে সেভাবে আসছিল না। পণ্ডিত রবিশংকরের বন্ধু জর্জ হ্যারিসন সেই সময় পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় রক গায়ক ছিলেন। রবিশংকরকে আমরা একজন ভারতীয় হিসেবেই চিনি। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তার সাক্ষাৎকারে শুনেছি, তিনি বলতেন, পূর্বপুরুষ সূত্রে আমি বাঙালি। এই দুই বিখ্যাত মানুষ মিলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখন কাজ করা শুরু করলেন, তখন পশ্চিমা দেশগুলোতে, বিশেষ করে আমেরিকায় সুধীজন, সুধীসমাজ, গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ঘটনাটি মানুষের নজরে আসলো। কতটা দৃষ্টি কেড়েছিল সেই সময়কার একটা ঘটনাতে বোঝা যায়। জর্জ হ্যারিসন বলেছিলেন, তারা যখন এই কনসার্টের প্রস্তুতি নেন, তখন একটি কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেরো, এটি নিয়ে মানুষের মধ্যে এত আগ্রহ তৈরি হলো, সেই দিন দুটি কনসার্ট করতে হলো।
রঞ্জন সেন বলেন, সেদিন পণ্ডিত রবিশংকর ও জর্জ হ্যারিসন ছাড়াও পৃথিবীর আরও নামিদামি শিল্পী, যেমন- বব ডিলান, ওস্তাদ আল্লারাখা, ওস্তাদ আকবর আলী খান পারফর্ম করেছিলেন। এই কনসার্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর নির্মম হত্যালীলা পুরো বিশ্বের নজরে আসে। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোতেও জনমত তৈরিতে খুব সাহায্য করেছিল।
‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ- দুই বন্ধু এক দেশ’ বইয়ের অন্যতম লেখক প্রিয়জিৎ দেবসরকার বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে এটি আমার তৃতীয় বই। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে আমি ভীষণভাবে আগ্রহী।
তিনি বলেন, পণ্ডিত রবিশংকর ও জর্জ হ্যারিসনের এই কনসার্ট পুরো পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হতো, কোথাও একটি গ্যাপ রয়েছে। এটির ওপর সেভাবে আমরা কোনো বই পাইনি। তাই আমি ও আমার বন্ধু আবু সাঈদ মিলে কোভিডের লকডাউনের মধ্যেই রিসার্চ করে লেখা শুরু করি। বইটি আরও আগে নিয়ে আসার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা সেটি করে উঠতে পারিনি। আমরা বাংলাদেশে বইটির ইংরেজি সংস্করণ বের করছি স্বপ্ন ৭১ প্রকাশনী থেকে।
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ঢাকা থেকে আসা শরিফুল্লাহ সাদেক বলেন, এটি একটি অসাধারণ বই। তখন একটি দেশকে কেন্দ্র করে দুই বন্ধু মাঠে নেমেছিলেন। মুক্তির জন্য সংগ্রামীদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে দুই বন্ধু মিলে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ করেছিলেন। আবার সেটিকে স্মরণ করে বই লিখেছেনও দুই বন্ধু। তারা আবার একজন ভারতের একজন বাংলাদেশের।
‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ- দুই বন্ধু এক দেশ’ বইয়ে তিনটি অধ্যায়। ১১৫ পৃষ্ঠার বইটির দাম ২৯৯ রুপি। বাংলা ভাষায় লেখা বইটি বেরিয়েছে দীপ প্রকাশনী থেকে। ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে।