শিরোনাম
একদিন অভাবের তাড়নায় যে সুই-সুতো হাতে তুলে নিয়েছিলেন, সেগুলোই আজ তাকে এনে দিলো ভারতবর্ষের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান। বলা হচ্ছে প্রীতিকণা গোস্বামীর কথা। এ বছর পদ্মশী পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের বাসিন্দা প্রীতিকণা। ১৯৭৩ সালে পাঁচ বোনের সংসার চালাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই সেলাইয়ের কাজ ধরেছিলেন তিনি।
স্থানীয় সময় গত বুধবার রাত ১০টায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ফোনে সুখবর পান প্রীতিকণা গোস্বামী। এখনো তার সেই ঘোর কাটেনি।
প্রীতিকণার কাছে সেলাই শুধু শিল্পসৃষ্টির জন্য নয়, নারীর ক্ষমতায়নের জন্যও বটে। তার মতো দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে যেতে আরও বহু দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তিনি।
গ্রাম বাংলার এক মেয়ের সাদামাটা জীবন যেভাবে শুরু হয়, ঠিক তেমনি শুরু প্রীতিকণার। কিন্তু সংসারে ঝড় নামে ১৯৭৩ সালে বাবার অকাল মৃত্যুর পর।
তখন প্রীতিকণা গোস্বামী সদ্য ম্যাট্রিক পাস করেছেন। কীভাবে সংসারের হাল ধরবেন তাই ভেবে রাতের ঘুম উড়ে যায় তার।
সেসময় এক বন্ধুর বাড়িতে যান। ওই বন্ধু একটি শাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করছিলেন। সেই সেলাই রেখে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যান সেই বন্ধু। প্রীতিকণা বসে না থেকে সেই শাড়িতে খানিকটা সেলাই করে দিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে তার বন্ধু সেই শাড়ির সেলাই দেখে অবাক হয়ে যান। বন্ধু যদি কিছু বলেন এই ভেবে প্রীতিকণা সেলাইয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে অমূল্য হীরা চিনতে ভুল হয়নি বন্ধুটির।
সেই বন্ধুই প্রীতিকণাকে প্রস্তাব দেন কলকাতায় গিয়ে শাড়ি সেলাই করার কাজ আনতে। যোগাযোগ করিয়ে দেন একটি দোকানের সঙ্গে। কিন্তু বাড়িতে শাড়ি নিয়ে সেলাই করতে গেলে আগে ৫০ রুপি জমা রাখতে হয়। সেই সময় তার কাছে ছিল ৩০ রুপি।
তবে সেলাইয়ের কাজে আগ্রহ দেখে সেই দোকানের মালিক প্রীতিকণাকে প্রস্তাব দেন দোকানে বসে শাড়ির ওপরে কিছু একটা করে দেখাতে। তার হাতের কাজ দেখে অবাক হন ওই ব্যক্তি। পরে পিস হিসাবে সেলাইয়ের কাজ দেন তিনি। সেই থেকে শুরু। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রীতিকণা করে চলেছেন শাড়িতে সেলাইয়ের কাজ।
এর মধ্যে প্রীতিকণার সংসার হয়। ঘর আলো করে আসে দুই কন্যা। তবে জীবনের মোড় ঘোরে ১৯৯০ সালে। তখন ক্রাফট কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের তৎকালীন চেয়ারপারসন প্রীতিকণাকে একটি ওয়ার্কশপ খোলার পরামর্শ দেন। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রামের নারীরা তার সেই ওয়ার্কশপে গিয়ে শাড়িতে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন।
২০০১ সালে সূচ শিল্পের জন্য জাতীয় পুরস্কার পান প্রীতিকণা গোস্বামী। এবার ২০২৩ সালে ভারতীয় প্রেসিডেন্টের হাত থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার নেবেন তিনি।