শিরোনাম
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবারের (২৬ জানুয়ারি) ঘটনাটি ওই এলাকায় প্রায় দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। এর জেরে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, শরণার্থী শিবিরটিতে বসে জঙ্গিরা বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছিল। তাদের ধরতেই অভিযান চালায় ইসরায়েল।
তবে এর সঙ্গে কিছু ঐতিহাসিক বিষয়ও জড়িত। গত বছর পর্যন্ত সেখানে ইসরায়েলের অভিযান বাড়ছিল এবং নতুন প্রজন্মের সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে প্রায়ই তাদের সংঘর্ষ হচ্ছিল। অনেকেই ২০০২ সালের এপ্রিলের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে এটিকে দ্বিতীয় ‘ইন্তিফাদা’ বা ফিলিস্তিনি আন্দোলন হিসেবে বর্ণনা করছিলেন।
ওই সময় ইসরায়েল একটি পূর্ণ সামরিক অভিযান চালায়, যা জেনিনের যুদ্ধ নামে পরিচিত। ওই যুদ্ধে অন্তত ৫২ ফিলিস্তিনি ও ২৩ ইসরায়েলি সৈন্য মারা যান। এর জেরে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলে অনেকবার আত্মঘাতী বোমাহামলা চালায়।
জেনিন শিবিরের বড় অংশই তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে ফিলিস্তিনিরাও নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা শুরু করে। গত বসন্তে ব্রেক দ্য ওয়েভ নামে অপারেশন শুরু করে ইসরায়েল।
এর মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে কথিত আইএস সমর্থকরা। বেশ কিছু ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীও মারা যান, যাদের মধ্যে রাদ হাজেমও ছিলেন। হাজেম তেল আবিবের একটি বারে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
ফলে জেনিন আবার আলোচনায় আসে এবং ইসরায়েলের তল্লাশি, গ্রেফতার ও অভিযান বেড়ে যায়।
তবে পুরো পশ্চিম তীরে মৃত্যুর ঘটনা আরও বেশি। গত বছর সেখানে অন্তত দেড়শ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের অনেকেই কেবল সামরিক গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়েছিলেন। কেউ কেউ হয়তো নিরীহ পথচারীই ছিলেন।
জাতিসংঘ ও কিছু মানবাধিকার সংস্থা বরবরই ইসরায়েলকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য অভিযুক্ত করে আসছে।
সেখানকার শহরগুলোতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসনক্ষমতাও সীমিত হয়ে এসেছে। তারা এরই মধ্যে জেনিন ও নাবলুসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নব্বইয়ের অসলো শান্তি প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আব্বাসের দল ফাতাহ পার্টির প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে হামাস।
এ অবস্থায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয় করছে। যার অর্থ হলো, তারাই কিছু তথ্য আদান-প্রদান করছে। যদিও প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেছেন, জেনিনে হামলার কারণে নিরাপত্তা সমন্বয় তারা বন্ধ করে দেবেন।
মূলত জেনিন ও নাবলুসের নতুন প্রজন্মের যোদ্ধারা মাহমুদ আব্বাসের সরকারকে প্রত্যাখ্যান করছে। তারা সশস্ত্র হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। তারা নিজেদের ‘জেনিন ব্যাটালিয়ন’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। আর নাবলুসে তাদের পরিচিতি ‘লায়নস ডেন’ হিসেবে।
এসব যোদ্ধা জর্ডান থেকে চোরাচালান হয়ে আসা, নাহয় ইসরায়েলি ঘাঁটি থেকে চুরি বা বিক্রি হওয়া অস্ত্র ব্যবহার করছে।
ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা এক সাংবাদিক বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থা। এসব লোক লড়াই করতে চায়। তারা প্রাণ দিতে আগ্রহী।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, তারা বেসামরিক নাগরিক ও সৈন্যদের ওপর হামলা প্রতিরোধ করছে। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের দাবি, জিহাদীদের টেরর স্কোয়াড ইসরায়েলে হামলা করতে চাইছে।
এর মধ্যেই জেনিনে রক্তক্ষয়ী হামলায় পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা