শিরোনাম
কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের বালাকোটে বিমানহামলা চালায় ভারত। এর জেরে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা এত বেড়ে গিয়েছিল যে, তারা পারমাণবিক যুদ্ধের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইতে এমন দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। খবর বিবিসির।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারে শীর্ষ কূটনীতিক এবং তার আগে সিআইএ প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করেছেন পম্পেও। সেসব দিনের স্মৃতিচারণ করে লেখা বই ‘নেভার গিভ অ্যান ইঞ্চ’ প্রকাশিত হয়েছে গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি)। সেই বইতেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্যটি করেছেন তিনি।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত-পাকিস্তান শত্রুতা একটি পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল, সেটি হয়তো বিশ্ব ঠিকমতো জানে না। তার কথায়, ‘সত্যটি হলো, উত্তর আমিও ঠিকভাবে জানি না; শুধু জানি, এটি খুব কাছাকাছি ছিল।’
পম্পেও বলেছেন, তিনি ‘কখনো সেই রাতটি ভুলবেন না’। সেদিন হ্যানয়ে ‘পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা’ শীর্ষক বৈঠকে ছিলেন তিনি। সেই সময় ভারত ও পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে চলে আসা বিরোধের কারণে একে অপরকে হুমকি দেওয়া শুরু করে।
তার মতে, যে হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সৈন্য নিহত হন, সেটি সম্ভবত পাকিস্তানের দুর্বল সন্ত্রাসবিরোধী নীতির কারণে ঘটেছিল। পাকিস্তানের ভেতরে বিমানহামলা চালিয়ে এর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ভারত। পরে পাকিস্তানিরা গুলি করে একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং পাইলটকে বন্দি করে রাখে।
মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, তখন হ্যানয়ে এক ভারতীয় ‘কাউন্টারপার্ট’ (সমান পদমর্যাদার ব্যক্তি)-এর সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হয়। ওই ভারতীয় নাগরিকের নামপ্রকাশ করেননি তিনি।
সাবেক এ কূটনীতিক লিখেছেন, ভারতীয় ব্যক্তিটি বিশ্বাস করেছিলেন, পাকিস্তানিরা হামলার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। আর ভারতও সামনে এগোনোর কথা ভাবছে। তখন আমি তাকে কিছু না করতে অনুরোধ জানাই এবং আমাদের এক মিনিট সময় দিতে বলি।
পম্পেও বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। ওই সময় বোল্টনও তার সঙ্গে হোটেলের ছোট্ট নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপনায় ছিলেন।
সাবেক মার্কিন মন্ত্রী বলেন, আমি পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার সঙ্গে আগেও বহুবার কথা হয়েছে। ভারতীয়রা আমাকে যা বলেছিল, আমি তাকে সেগুলো জানাই।
‘তিনি (বাজওয়া) বলেন, এটি সত্য নয়। যেমনটি আশা করা যায়, তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, ভারতীয়রাই পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তখন পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছে না এটি উভয় পক্ষকে বোঝাতে আমাদের কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। ওই সময় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে থাকা আমাদের টিমগুলো খুবই ভালো কাজ করেছিল।’
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘ভয়ংকর পরিণতি এড়াতে সেই রাতে আমরা যা করেছিলাম, তা অন্য কেউ করতো না।’
পম্পেও’র এই দাবির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ভারত ও পাকিস্তান।