শিরোনাম
জার্মানিতে ৫০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ন্যাটো ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দীর্ঘ আলোচনা করেছেন ইউক্রেনের চাওয়া প্রধান যুদ্ধট্যাঙ্ক পাঠানোর বিষয়ে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে শুক্রবারের সম্মেলন। এতে জার্মানির তৈরি যুদ্ধট্যাঙ্ক লিওপার্ড-২ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের এম ১ আব্রামস ট্যাঙ্ক পাঠানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি ইউক্রেনের মিত্ররা। কোনো চুক্তি সই না হওয়ায় শিগগিরই ট্যাঙ্ক পাচ্ছে না ইউক্রেন। রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় এই ট্যাঙ্ক খুব জরুরি মনে করছে কিয়েভ। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও এএফপির।
জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে এই আলোচনা। পরে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড জে অস্টিন বলেন, লিওপার্ড ২ ট্যাঙ্ক ইউক্রেনে পাঠানোর বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি জার্মানি। ওয়াশিংটন নিজস্ব এম ১ আব্রামস ট্যাঙ্ক পাঠাতে রাজি। তবে এই অবস্থান আগামীতে পরিবর্তন হবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।
ক্ষতিগ্রস্ত যুদ্ধবহর শক্তিশালী করতে কিয়েভ বারবারই আধুনিক পশ্চিমা যুদ্ধট্যাঙ্ক পাঠানোর অনুরোধ করে আসছে। সম্প্রতি অল্পসংখ্যক চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাঙ্ক দেওয়ার কথা জানিয়েছে ব্রিটেন। আগামী কয়েক মাস রুশ হামলা প্রতিরোধে সহায়তায় অন্য দেশগুলোকেও ট্যাঙ্ক পাঠানোর অনুরোধ করেছে যুক্তরাজ্য। বৈঠকে লিওপার্ড ২ ট্যাঙ্ক পাঠানোর বিষয়ে অন্য দেশগুলোকে অনুমতি দেওয়া হবে, কিংবা নতুন চুক্তি হবে বলে আশা করেছিল ইউক্রেন। কিন্তু কয়েকদিন আলোচনা করেও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি না হওয়ায় নিজস্ব এই ট্যাঙ্ক পাঠাতে পারবে না অন্য ৫৪টি দেশও। কারণ, এতে জার্মানির অনুমোদন দরকার।
বৈঠকে বার্লিন এবং ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা বলেছেন, চুক্তি না হলেও তাঁরা হাল ছাড়ছেন না। যে কোনো সময় পাঠাতে পারেন ট্যাঙ্ক। তাঁরা ইউক্রেনকে সহায়তা করতে অন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন।
অস্টিন বলেন, ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান পাঠিয়ে ইউক্রেনের চাহিদা পূরণে বড় রকম চাপ রয়েছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পক্ষ থেকে। জার্মানির প্রতিরক্ষা সচিব বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, বার্লিন তার লিওপার্ড ট্যাঙ্কের প্রশিক্ষণ দেবে। ভবিষ্যৎ চুক্তির জন্য ট্যাঙ্কগুলোর একটি তালিকাও করা হবে।
গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিমারা একাধিক নিষেধাজ্ঞা ভেঙে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং সাঁজোয়া যুদ্ধযান পাঠাতে সম্মত হয়েছে। এই পদক্ষেপকে রাশিয়া উস্কানি হিসেবে দেখছে। বসন্তের আগে রুশ হামলা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পশ্চিমারা। ফলে কিয়েভে ট্যাঙ্ক পাঠাতে চাপ দিচ্ছে ব্রিটেন ও অন্যান্য দেশ। শুক্রবারের বৈঠকে জার্মানির ওপর ব্যাপক চাপ দিলেও ট্যাঙ্ক পাঠাতে রাজি হয়নি বার্লিন। দেশটি বলছে, ট্যাঙ্ক পাঠানোর সুবিধা-অসুবিধা সব বিবেচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার নিয়মিত ভাষণে বলেছেন, এই যুদ্ধে কিয়েভের প্রতিরক্ষার জন্য ট্যাঙ্ক ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, 'যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্যাঙ্ক পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।'
রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার গ্রুপকে আন্তঃদেশীয় অপরাধী সংগঠন বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী সপ্তাহে গ্রুপটি ছাড়াও সহায়তাকারীদের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি জানান, সংগঠনটি ইউক্রেন ও অন্য জায়গায় নৃশংসতা চালাচ্ছে, লঙ্ঘন করছে মানবাধিকার। বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধে গ্রুপটির ৫০ হাজার ভাড়াটে সদস্য রয়েছে। এরা রুশ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।