শিরোনাম
রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে বিজয়ী করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটোসহ ৫০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কর্মকর্তারা আটঘাট বেঁধে নেমেছেন।
সম্প্রতি তাঁরা বসেন জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে। ইউক্রেনের ডিফেন্স কন্টাক্ট গ্রুপ আয়োজিত সমাবেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির মিত্ররা ভারী অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও ঐক্যে পৌঁছাতে পারেননি। সম্মেলনজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল জার্মানির তৃতীয় প্রজন্মের প্রধান যুদ্ধট্যাঙ্ক লিওপার্ড-২ ইউক্রেনকে পাঠানোর বিষয়টি।
বিধ্বংসী ওই ট্যাঙ্ক পাঠাতে দেশটির ওপর রীতিমতো বড় ধরনের চাপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। যদিও জার্মানির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাঁর হাতে থাকা আব্রামস ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে দেয়, তাহলেই কেবল বার্লিন ওই ট্যাঙ্ক দেবে। আর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইউক্রেন বিজয়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত সব ধরনের সহায়তা করবে ওয়াশিংটন। এরই মধ্যে ২৫০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাঠানো হবে ২ হাজার রকেট এবং ৫৫৩ সাঁজোয়া যান। কিন্তু তাঁরা ট্যাঙ্ক পাঠানোর ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছুই বলেনি। অবশ্য রাশিয়ার হুঁশিয়ারি, ট্যাঙ্ক পাঠালেও কোনো লাভ হবে না, বরং এসব ট্যাঙ্ক রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা কারণে ইউক্রেনের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস, এপি ও আলজাজিরার।
সম্মেলনের শুরুতেই বক্তব্য দেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। এ সময় তিনি কিয়েভের মিত্রদের উদ্দেশ করে বলেন, বড় ধরনের সহায়তার এখনই সময়। ন্যাটো এবং পশ্চিমা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, 'রাশিয়া তার বাহিনী পুনর্গঠন করছে। নতুন সেনা নিয়োগ করে পুনরায় সজ্জিত করার চেষ্টা করছে। তাই এখন আর দেরি করার সময় নেই। ইউক্রেনের জনগণ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।' অবশ্য তিনি এ সময় ট্যাঙ্ক পাঠানোর কথা স্পষ্ট করে বলেননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অন্যান্য সরঞ্জামের চেয়ে ট্যাঙ্ক দেওয়ার ওপর বেশি জোর দিয়ে আসছেন। এদিকে, ৪৩ কোটি ডলার মূল্যের যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠানোর কথা জানিয়েছে ফিনল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আব্রামস এবং জার্মানির লিওপার্ড-২ ট্যাঙ্ক দুটিই চেয়েছে ইউক্রেন।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ট্যাঙ্ক সরবরাহ করা হবে কিনা তা নিয়ে সম্মেলনে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরিস পিস্তোরিয়াস বলেন, ট্যাঙ্ক দেওয়া না-দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে নানা কারণ আছে। প্রায় এক বছর ধরে চলমান যুদ্ধে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুবিধা ও অসুবিধাগুলো খুব সাবধানে মূল্যায়ন করা উচিত।
এ অবস্থায় নিরাপত্তা বিশ্নেষকরা বিকল্প একটি পথ বাতলে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, জার্মানি নিজস্ব ট্যাঙ্ক না পাঠালে লিওপার্ড-২ ট্যাঙ্কের নির্মাতা হিসেবে অন্য ১২টি ইউরোপীয় দেশকে অনুমোদন দিতে পারে। তারা নিজেরা ব্যবহারের পাশাপাশি কিয়েভকেও কিছু ট্যাঙ্ক দিতে পারে। কোনো এক দেশের ওপর চাপ না দিয়ে ভাগাভাগি করে নিতে পারে। সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তনে নতুন সরঞ্জাম চান। এ সময় ট্যাঙ্ক দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে, শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি এস পেসকভ বলেছেন, রাশিয়ার অনিবার্য বিজয়ের আগে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ কেবল ইউক্রেনীয়দের দুর্ভোগকেই বাড়াবে।