শিরোনাম
আফ্রিকায় ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা একসময় দুঃসাধ্য ছিল। ষাট, সত্তর বা আশির দশকে মহাদেশজুড়ে একদলীয় শাসন প্রচলিত ছিল। সে সময় নতুন নেতারা অভ্যুত্থান ঘটানো, পূর্বসূরিদের মৃত্যু বা অভিজাতদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় বসতেন।
এমনকি নব্বইয়ের পরেও, যখন একের পর এক আফ্রিকান দেশ বহুদলীয় নির্বাচন পদ্ধতি বেছে নেয় তখনও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। ভোটাররাও খুব কমই দায়িত্বপ্রাপ্তদের এড়িয়ে চলতো। কেননা কখনও কখনও নির্বাচকরা তাদের শাসক দলগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ রেখে চলছিল। প্রায়শই এটি এমনটি ঘটতো কারণ যারা ক্ষমতায় থাকতো তারা নির্বাচনে কারচুপি ও ভোটারদের ভয় দেখানোর জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছিল।
সামান্য হলেও আশ্চর্যের বিষয় শুধু সাব-সাহারান আফ্রিকানদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই গণতান্ত্রিক সরকার নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। তবুও একটি প্রতিশ্রুতিশীল পরিবর্তন হলো বিরোধী দলগুলো এখন শক্তিশালী ও প্রতিযোগী মনোভাবমূলক হয়ে উঠছে। ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, ৪২ জন নতুন আফ্রিকান নেতা একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পর দায়িত্বগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন ক্ষমতাসীন দলের উত্তরসূরি ছিলেন। বাকি ২৫ জন বিরোধী রাজনীতিবিদ ছিলেন, যা আগের তিন দশকের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এ ধরনের পরিবর্তন সম্প্রতি কেনিয়া, মালাউই ও জাম্বিয়াসহ অন্যান্য দেশের মধ্যেও ঘটেছে। এমনকি যখন বিরোধীরা ক্ষমতা দখল করেনি, তখনও তারা অনেক ক্ষেত্রেই টালি তৈরি করে যা অ্যাঙ্গোলা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের শাসক দলগুলোকে উদ্বিগ্ন করে। ২০২৩ সালে আফ্রিকায় আরও শক্তিশালী অবস্থান হবে নির্বাচনকেন্দ্রিক, সেটিই এখন ধারণা করা হচ্ছে।
এই প্রবণতার পেছনে আসলে কী? বলা চলে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর রয়েছে এর পেছনে। বিরোধী দলগুলো চতুরতার সঙ্গে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। আফ্রিকানরা ধীরে ধীরে শিক্ষিত হচ্ছে, জানার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে এবং নগরায়ণ ঘটছে। ফলে রাজনীতিবিদদের প্রতি তারা কম শ্রদ্ধাশীল। তরুণ জনগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন দলগুলোর নস্টালজিক প্রচারে মুগ্ধ নয়, যেগুলো তাদের শেকড়কে স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য চিহ্নিত করে। বরং তার পরিবর্তে তারা দুর্নীতিগ্রস্ত ও অভিজাতদের নজরে রাখছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্থনৈতিক অবস্থা আরও কঠিন হচ্ছে এবং আফ্রিকানরা তাদের নেতাদের আংশিকভাবে দায়ী করে এই কারণে। সিয়েরা লিওন ও এর পশ্চিম আফ্রিকার প্রতিবেশী, লাইবেরিয়ায়, ক্ষমতাসীনরা তাদের অর্থনীতি পরিচালনা ও দুর্নীতির অভিযোগের কারণে বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়। নাইজেরিয়ায়, মো. বুহারির আট বছরের দুঃশাসনের পর প্রতিষ্ঠাবিরোধী আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এই নয় যে বিরোধী দলগুলো জয়ী হবে। নাইজেরিয়ার ক্ষমতাসীন দল, অল প্রগ্রেসিভ কংগ্রেস (এপিসি), সরকার পরিচালনার চেয়ে হাল আমলের রাজনীতিতে অনেক ভালো। মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনা বিভক্ত বিরোধীদের মুখোমুখি হয়েছেন। যদিও পুনরায় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে তার।
এই মহাদেশের অন্যান্য দেশে, বিরোধীদের ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে, কেননা শাসক দল পরাজয় মেনে নেবে না সহজে। জানু-পিএফ, জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন দল। বলা হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাধা দিচ্ছে তারা এবং নির্বাচনের আগে ভোটারদের নিজেদের দিকে টেনে নেবে অন্যথায় হেরে যাবে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত জানু-পিএফ-এর ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর সমর্থন বজায় থাকবে এবং আঞ্চলিক আধিপত্য থাকবে, ততদিন জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি। অভিযোগ আছে, ২০১৮ সালে নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। অজনপ্রিয় সরকার হলেও ক্ষমতায় থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া বেশ কয়েকটি দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ নির্বাচন নাও হতে পারে। দক্ষিণ সুদানে ২০১৫ সালে ভোট হওয়ার কথা ছিল কিন্তু নেতারা বারবার এর পরিবর্তে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করার পথ বেছে নিয়েছেন। ২০২০ ও ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পরে, মালির জান্তা বলেছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করবে। মালিয়ানরা এখনও অপেক্ষা করছে। চাদে, আরেকটি জান্তা সরকার ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অক্টোবরে এটি তার ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ সামরিক শাসনের মেয়াদ আরও দুই বছরের জন্য বাড়িয়ে দেয়।
যদিও এসব ঘটনা পুরো আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করছে না। কারণ, ৫৪টি দেশের একটি জটিল ও বৈচিত্র্যময় মহাদেশ হলো আফ্রিকা।