শিরোনাম
বছর খানেক আগেও মধ্যপ্রাচ্যে একটি উদীয়মান শক্তি বলে মনে করা হচ্ছিল ভ্লাদিমির পুতিনকে। রাশিয়া ও মিসর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভূমধ্যসাগরে যৌথ নৌমহড়া করে এবং আরও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। আবুধাবির প্রধান সার্বভৌম-সম্পদ তহবিল মুবাদালা রাশিয়ায় নিজেদের বৃহত্তম বিনিয়োগ হিসেবে পেট্রোকেমিক্যাল জায়ান্ট সিবুরের ১ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। রুশ ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন প্রকাশ্যেই লিবিয়ায় আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
কিন্তু এর ১২ মাস যেতে না যেতেই রুশ বাহিনী অন্যত্র আটকে গেছে। মুবাদালা বিনিয়োগ স্থগিত করেছে। প্রিগোজিন লিবিয়ার রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর বদলে ইউক্রেন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কার্যত, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব খর্ব করেছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এই ধারা ২০২৩ সালেও চলতে থাকবে।
অর্থনৈতিক লেনদেন দিয়েই শুরু করা যাক। রাশিয়া-মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে এটি কখনোই খুব বেশি গভীর ছিল না। যুদ্ধের আগেও সৌদি আরব নেদারল্যান্ডসের তুলনায় রাশিয়া থেকে আমদানি করতো অর্ধেক। অথচ রাশিয়ার তুলনায় নেদারল্যান্ডস ছোট অর্থনীতির দেশ এবং জনসংখ্যা নয় ভাগের এক ভাগ মাত্র।
যুদ্ধকালে রাশিয়া থেকে আমদানির সুযোগ আরও কমেছে। ফলে উপসাগরীয় অঞ্চলটি বিনিয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। মিসরের মতো দেশগুলো এরই মধ্যে রুশদের বিকল্প পর্যটক আকর্ষণ করতে চাইছে।
তবে নতুন বছরে মধ্যপ্রাচ্যে রুশ জ্বালানির চাহিদা বাড়তে পারে। রাশিয়ার তেল ও পরিশোধিত পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষিদ্ধ হলেও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন নতুন ক্রেতা খুঁজে পাবে। এ অঞ্চলের সংস্থাগুলো নিজ দেশে ব্যবহার অথবা বাইরে বেশি দামে বিক্রির জন্য সাশ্রয়ী রুশ তেল কিনবে৷
অস্ত্রের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়া এ অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ তাদের এ ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইউক্রেনে কিছু রুশ অস্ত্রের বাজে পারফরম্যান্স আরব ক্রেতাদের অনাগ্রহী করে তুলতে পারে। মূলত গুণগত মান কখনোই রুশ অস্ত্রের চাহিদার কারণ ছিল না, ছিল কেনার বিষয়ে কম শর্ত থাকাটা।
যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার হাতে বিক্রি করার জন্য কম অস্ত্র থাকবে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো রুশ অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশগুলো আটকে দেবে। এরপরও রাশিয়া যেসব অস্ত্র তৈরি করতে পারবে, সেগুলো ইউক্রেনে প্রয়োজন হবে। ফলে আরবের বাহিনীগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র, চীন নাহয় তুরস্কের মতো বিকল্পের দিকে তাকাতে হবে।
উপসাগরীয় দেশগুলো হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই রাখবে, তবে তার বিনিময়ে পাওয়ার আশা করবে কম। সৌদি আরব তেলের দাম চড়া রাখতে আগ্রহী হওয়ায় ওপেক প্লাস চুক্তি অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করবে। পুতিনের ভয়ে পলাতক ধনীদের আশ্রয়দাতা সংযুক্ত আরব আমিরাত রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে।
২০২৩ সালে ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বেশ জটিল হবে। বাণিজ্য বাড়বে, বিশেষ করে রাশিয়া যখন ড্রোনসহ অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রের জন্য ইরানের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু উভয়কেই আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কম দামে তেল বিক্রি করতে হবে। ফলে মূল্যযুদ্ধ ইরানের জন্য যন্ত্রণাদায়ক হবে।
আরব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বদলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার চেষ্টা করবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান রাশিয়ার কাছ থেকে লাভ খোঁজার চেষ্টা করবেন। লিবিয়ায় পরস্পরবিরোধী পক্ষকে সমর্থন করলেও মস্কোকে সংলাপের জন্য চাপ দেবেন তিনি। এছাড়া সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারের সঙ্গে ফের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন এরদোয়ান। রাশিয়া বা তুরস্ক কেউই চায় না, সিরিয়ায় তাদের শূন্যস্থান ইরান পূরণ করুক।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট