মুদ্রানীতি-রাজস্বে অস্থিরতা হতে পারে বড় চ্যালেঞ্জ

ফানাম নিউজ
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৩২
আপডেট  : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৩৪

বিশ্ব অর্থনীতি ক্রমেই ধীর হচ্ছে। ২০২৩ সালে অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক দেশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে একদিকে হুমকির মুখে পড়েছে হাউজিং মার্কেট, অন্যদিকে বাড়ছে বেকারত্ব। তাছাড়া কঠোর মুদ্রানীতির কারণে আরও শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। এতে উদীয়মান অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি দেখা দিচ্ছে। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও বেকায়দায় পড়ছে দেশগুলো।

এদিকে ইউরোপজুড়ে যে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে তাতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কল-কারখানা। এতে ভোক্তাদের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একই সঙ্গে চীনের হাউজিং মার্কেটও ধসের মুখে। সেখানে করোনার শূন্য নীতির কারণেই মূলত অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে কিছুটা স্বস্তি থাকতে পারে। কারণ ইউরোপের হাতে যথেষ্ট গ্যাস মজুত রয়েছে। এক্ষেত্রে বড় সংকট হবে না। তবে পণ্যের বাজারে অস্থিরতা থাকবে। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে।

বলা হচ্ছে, একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতি থাকবে অন্যদিকে জ্বালানি সংকটও থাকবে। তাছাড়া শ্রমবাজারও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকছে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক বেকারের জন্য প্রায় দুটি পদ শূন্য। পরবর্তী শীতের জন্য প্রস্তুতি নিতে ইউরোপকে ফের গ্যাস মজুতের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়া থেকে যে পরিমাণ সরবরাহ এসেছে সেভাবে আর হবে না। যদি চীন ঘুরে দাঁড়ায় তাহলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবে। এতে বিশ্বজুড়ে এলএনজির চাহিদা বেড়ে যাবে। কিন্তু সরবরাহ সেভাবে নাও বাড়তে পারে। তাই এলএনজির উচ্চমূল্যের কারণে ব্যয় আরও বেশি হতে পারে।

উন্নত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানেই থাকবে। মূল্য স্থিতিশীল রাখাই হবে প্রধান অগ্রাধিকার। কিন্তু টেকনোক্র্যাটরা মূল্যস্ফীতিকে দমন করার নামে অর্থনৈতিক মন্দা সহ্য করতে পারে। তাছাড়া জ্বালানি ব্যয়ের কারণে অর্থনীতি রক্ষায় ইউরোপের সরকারগুলো বিপুল অর্থ ব্যয় করছে।

আর্থিক কঠোরতা এবং রাজস্ব স্থায়িত্বের মধ্যে পরবর্তী দ্বন্দ্ব ঋণগ্রস্ত ইতালিতে ঘটতে পারে। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সুদের হার বাড়ালেও ইতালীয় বন্ড কিনছে। নানা কারণে ইতালির বাজেটে বড় ধরনের চাপ আসতে যাচ্ছে।

মনে করা হচ্ছে, মুদ্রা ও রাজস্বের দ্বন্দ্ব জাপানেও আঘাত হানতে পারে। দেশটির বিশাল পাবলিক নেট ঋণ, জিডিপির প্রায় ১৭০ শতাংশ, এখন পর্যন্ত টেকসই রয়েছে। কারণ কম সুদের হারের প্রতি ব্যাংক অব জাপানের চলমান প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে জাপানের মূল্যস্ফীতি এখনো বাড়ছে। দেশটির শিথিল মুদ্রানীতি ও ফেডের কঠোর অবস্থানে চাপে রয়েছে ইয়েন।

একমাত্র বৃহৎ অর্থনীতি যেখানে রাজস্ব ও আর্থিক নীতির মধ্যে কোনো উত্তেজনা নেই তা হলো চীন। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির সমস্যাও নেই। কারণ চীনের প্রবৃদ্ধি ধীর হয়েছে। তবে এটি খুব একটা ভালো লক্ষণ নয়। যেহেতু চীন তার সীমানা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখছে। তাই বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে এশিয়ার অন্যান্য দেশে। চীন যে ভারসাম্যমূলক আইনের মুখোমুখি হচ্ছে তা প্রবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব বা উচ্চ হার এবং টেকসই ঋণের মধ্যে নয়, বরং বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে। দেশটিকে অবশ্যই নৈতিক বিপদ সৃষ্টি না করে আবাসন সংকট সমাধান করতে হবে এবং শূন্য-কোভিড নীতি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

উদীয়মান অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ হলো ফেডের নীতির সঙ্গে তাল মেলানো। ক্রমবর্ধমান সুদের হারের অতীত পর্বগুলোর তুলনায় মধ্যম আয়ের দেশগুলো সম্পূর্ণভাবে আরও শক্তিশালী। সবচেয়ে বড় সমস্যা পাওয়া গেছে যেখানে দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক নীতিতে অসামঞ্জস্য ছিল। কিন্তু বিশ্বের গরিব অঞ্চল বিশেষ করে আফ্রিকা সংকটের দ্বারপ্রান্তে।