শিরোনাম
ইরানের সরকার সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী গোলযোগের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে প্রথমবারের মতো একজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ঘোষণা করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ‘আল্লাহর বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে মোহসেন শেকারিকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
একজন ‘দাঙ্গাকারী’ হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি তেহরানের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করেছিলেন এবং আধাসামরিক বাহিনীর একজন সদস্যকে কাটারির আঘাতে আহত করেছিলেন।
একজন অধিকারকর্মী বলেছেন, আইনের কোনো যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই লোক দেখানো বিচারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম টুইট করে বলেছেন, ইরানের কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে দ্রুত বাস্তব পরিণতির মুখোমুখি না হলে প্রতিদিন বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা শুরু হবে।
ইরানের বিচার বিভাগের নিজস্ব বার্তা সংস্থা মিজান জানিয়েছে, মামলায় আদালতকে জানানো হয়েছে মোহসেন শেকারি গত ২৫ সেপ্টেম্বর তেহরানের সাত্তার খান সড়কটি অবরোধ করেছিলেন এবং বিক্ষোভ দমনের লক্ষ্যে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী বাসিজ রেজিস্ট্যান্ট ফোর্সের একজন সদস্যকে কাটারি দিয়ে আক্রমণ করেছিলেন।
মিজান জানিয়েছে, গত ১ নভেম্বর আদালত তার রায়ে হত্যা, সন্ত্রাস এবং সমাজের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে দাঙ্গা এবং অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার জন্য এবং ‘আল্লাহর বিরুদ্ধে শত্রুতার’ দায়ে শেকারিকে দোষী সাব্যস্ত করে।
তিনি ঐ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন কিন্তু ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আপিল খারিজ করে রায় বহাল রাখে বলেও জানানো হয়।
ইরানি বিচার বিভাগ এখন পর্যন্ত ঘোষণা করেছে, বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত ‘আল্লাহর বিরুদ্ধে শত্রুতা’ বা পৃথিবীতে দুর্নীতির অভিযোগে বিপ্লবী আদালতে আরও ১০ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, গণবিক্ষোভ দমন করতে এবং জনগণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব মৃত্যুদণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত, গোপন ও চরম অন্যায্য বিচার প্রক্রিয়ার পর কঠোর শাস্তি আরোপের লক্ষ্যে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রভাবের অধীনে এই আদালতগুলো পরিচালিত হয়েছে বলে অ্যামনেস্টি মনে করেছে।
মাহ্সা আমিনি নামে ২২-বছর বয়সী এক নারী, সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে যাকে ইরানের নৈতিকতা রক্ষা পুলিশ আটক করেছিল, পুলিশের হেফাজতে তার মৃত্যুর পর সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ইরানের ইসলামী কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
মূলত নারী-নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভ ইরানের ৩১টি প্রদেশের ১৬০ শহরে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে একে এই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতি সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইরানের নেতারা এই বিক্ষোভকে বিদেশি শত্রুর উসকানিতে ঘটানো ‘দাঙ্গা’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, বিক্ষোভে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৭৫ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে ও ১৮ হাজার ২৪০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর ৬১ জন সদস্য নিহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।