প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কী বার্তা দিলো তালেবান

ফানাম নিউজ
  ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:২৬

প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড প্রথমবারের মতো সম্প্রতি কার্যকর করেছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। শুধু তাই নয়, ভুক্তভোগীর বাবার দ্বারাই প্রকাশ্যে গুলি করা হয় ওই খুনিকে। 

তালেবানের একজন মুখপাত্র জানান, দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম ফারাহ প্রদেশের একটি জনাকীর্ণ স্টেডিয়ামে ভুক্তভোগীর বাবা তিনটি গুলি করে অভিযুক্তের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয় সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। ২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সে বছর ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের মাটি ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশের সেনারা। শান্তি ফিরিয়ে আনতে দেশ শাসনের দায়ভার নেয় তালেবান।

এবার প্রথম প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো আফগান সরকার। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময় তালেবানের বেশ কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

আফগানিস্তানে আবারও শরিয়াহ আইন চালু করলো তালেবান সরকার। গত ১৪ নভেম্বর তালেবানের প্রধান নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, কিছু অপরাধের সাজা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে কোন ধরনের শাস্তি হতে পারে তা এখনও নিশ্চিত করেনি তালেবান সরকার। তবে একজন ধর্মীয় নেতা সে সময় বলেন, অঙ্গচ্ছেদ, প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ও পাথর ছুড়ে মারার মতো শাস্তি হতে পারে। এই নির্দেশের পরপরই প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর পাওয়া গেলো।

তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, বুধবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময়ে সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতি, সামরিক কর্মী, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ উপস্থিত ছিলেন না।

জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ওই ব্যক্তির নাম তাজমির। সে হেরাত প্রদেশের বাসিন্দা এবং তার বাবার নাম গোলাম সারওয়ার। পাঁচ বছর আগে মোস্তফা নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করেছিল সে এবং এতে তার মৃত্যু হয়।

এ হত্যামামলায় আফগানিস্তানের তিনটি আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে প্রধান ধর্মীয় নেতা মোল্লা আখুন্দজাদাও অনুমোদন দেন।

বিবিসির খবরে বলা হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে নোটিশ জারি করে লোকজনকে ওই স্টেডিয়ামে হাজির হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

ভুক্তভোগী মোস্তফার মা বিবিসিকে বলেন, তালেবান নেতারা তাকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি দোষী ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এই লোকটিকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে এবং আমার ছেলের মতোই কবর দিতে হবে। এ থেকে অন্য মানুষেরা শিক্ষা নিতে পারবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানি ট্রেম্বলে জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল এই সময়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল তালেবান সরকার। সে সময় শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পড়ে তালেবান সরকার।

সূত্র: বিবিসি