শিরোনাম
জার্মানিতে সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দেশজুড়ে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কট্টর দক্ষিণপন্থী ও সাবেক সামরিক সদস্যদের একটি গ্রুপ জার্মানির পার্লামেন্ট ভবন রাইখস্ট্যাগে অভিযান চালিয়ে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করছিল বলে সন্দেহ করা হয়। এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে জার্মানির একজন স্বল্পপরিচিত অভিজাত ব্যক্তিকে, যার নাম প্রিন্স ত্রয়োদশ হেইনরিখ (৭১)।
ফেডারেল কৌশুলিদের মতে, জার্মান পুলিশ ১১টি রাজ্যে অভিযান চালিয়ে যাদের গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে এই ব্যক্তিও রয়েছেন।
জার্মানির পুলিশ অনেকদিন ধরেই এ বিষয়ে নজরদারি চালাচ্ছিল। কারণ একটি চরমপন্থী গ্রুপ ‘রাইখসবার্গার (সিটিজেনস অব দ্য রাইখ) মুভমেন্টের’ অনেক সদস্য এই ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে মনে করা হয়। এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে অনেক সহিংস হামলা চালানো এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। এরা আধুনিক জার্মান রাষ্ট্রকে স্বীকার করতে চায় না।
প্রায় ৫০ জন পুরুষ ও নারী এই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এরা জার্মান প্রজাতন্ত্র উৎখাত করে তারা জায়গায় ১৮৭১ সালের জার্মানির ‘দ্বিতীয় রাইখের’ আদলে একটি নতুন রাষ্ট্র গড়ার পরিকল্পনা করছিল।
জার্মানির ফেডারেল কৌসুলির অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন, এখনো এই গোষ্ঠীর কোনো নাম তাদের কাছে নেই।
জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ১৩০টি অভিযান চালানো হয়, তাতে অংশ নেয় তিন হাজার কর্মকর্তা। অস্ট্রিয়া ও ইতালিতেও অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
জার্মানির বিচারমন্ত্রী মার্কো বাস্কম্যান টুইট করে বলেছেন, একটি বড় ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে এবং জার্মানির ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সশস্ত্র হামলার’ ষড়যন্ত্র চলছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ফেডারেল কৌসুলির অফিস বলছে, এই গ্রুপটি ২০২১ সালের নভেম্বর হতে একটি সহিংস অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করছিল। এই গ্রুপের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সদস্যরা নিয়মিত বৈঠকেও বসেছিল।
এই গ্রুপটি ক্ষমতা দখলের পর কীভাবে জার্মানি শাসন করবে, তার একটি পরিকল্পনাও তৈরি করেছিল। সরকারের স্বাস্থ্য, বিচার এবং পররাষ্ট্র দফতার কিভাবে পরিচালিত হবে, সেসবও এই পরিকল্পনায় ছিল। সদস্যদের এরকম একটা ধারণা দেওয়া হয়েছিল, তাদের লক্ষ্য একমাত্র অর্জিত হতে পারে সামরিক পন্থায় এবং রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাধ্যমে। এর মধ্যে লোকজনকে হত্যার কথাও বলা হয়েছিল।
তদন্তকারীরা এই চরমপন্থি গ্রুপ সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন গত এপ্রিল মাসে একটি অপহরণের পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পর। ইউনাইটেড পেট্রিয়ট নামের একটি দল এই অপহরণের পরিকল্পনা করছিল।
এই গ্রুপটিও রাইখসবার্গার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এরা জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লটারবাখকে অপহরণের পরিকল্পনা করছিল। একই সঙ্গে তারা জার্মানিতে এমন একটি গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছিল যাতে জার্মানির গণতন্ত্র শেষ হয়ে যায়।
জার্মানিতে এই অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে কট্টর দক্ষিণপন্থি দল এএফডির একজন সাবেক এমপিও জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি জার্মানির পার্লামেন্ট বান্ডেসট্যাগের নিম্নকক্ষের সদস্য ছিলেন। তাকে অভ্যুত্থানের পর বিচারমন্ত্রী করার কথা ছিল। আর পুরো অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকার কথা ছিল প্রিন্স হেনরিখের।
প্রিন্স ত্রয়োদশ হেনরিখ জার্মানির একটি অভিজাত পরিবার ‘হাউস অব রুসের’ বংশধর। এই পরিবার জার্মানির থুরিংগিয়া রাজ্যের একটি অংশ ১৯১৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেছে। পরিবারের সব পুরুষ সদস্যের নাম রাখা হয় ‘হেনরিখ’, তবে সেই সঙ্গে নামের সঙ্গে একটি সংখ্যাও যোগ করা হয়।
ষড়যন্ত্রকারীরা যে শুধু একটি ছায়া সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছিল তা নয়, পাশাপাশি তাদের একটি সশস্ত্র শাখা গড়ে তোলারও পরিকল্পনা ছিল। এই বাহিনীতে সামরিক বাহিনীর বর্তমান এবং সাবেক অনেক সদস্য ছিল, যাদের অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কথা ছিল। জার্মানির সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে অভিজাত স্পেশাল ইউনিটের সদস্যরাও এতে ছিল।
কৌসুলিরা বলছেন, সামরিক শাখা গঠনের উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় পর্যায়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মূল করা।
যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তাদের মধ্যে জার্মানির স্পেশ্যাল কমান্ডো ফোর্সের একজন সদস্যও আছেন। পুলিশ তার বাড়িতে এবং স্টুটগার্টের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি সামরিক ঘাঁটিতে তার রুমেও তল্লাশি চালিয়েছে।