শিরোনাম
এদিকে জ্বালানির দাম ইউরোপে শীতকালীন মৃত্যুকে প্রভাবিত করার আরেকটি প্রধান কারণ হতে পারে। তবে ভালো ব্যাপার হলো, পাইকারি বাজারে জ্বালানির দাম ওঠানামা করলেও, ইউরোপের অনেক দেশের সরকার পারিবারিক কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে।
নতুন নির্ধারিত জ্বালানিমূল্য গত বছরের চেয়ে বেশি হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে ধারবাহিক দামবৃদ্ধির হাত থেকে ভোক্তাদের বাঁচাবে। তবে দ্য ইকোনমিস্টের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জ্বালানির দামবৃদ্ধি ইউরোপে শীতকালীন মৃত্যুর ওপর নিম্ন তাপমাত্রার প্রভাবকে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে।
ইউরোপের গড় আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদ্যুতের দাম ১০ শতাংশ বাড়লে মৃত্যুহার শুন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে যায়। কারণ জ্বালানি বা বিদ্যুতের দাম বাড়লে এ অঞ্চলের অনেক পরিবারই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।
অনেকে বলছেন, এখন পর্যন্ত ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলোতে জ্বালানির দাম শীতকালীন মৃত্যুহারে খুব সামান্য প্রভাব ফেলেছে, কারণ জ্বালানির দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা হয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ পরিবার তাদের ঘর গরম রাখতে পারছেন।
দ্য ইকোনমিস্ট একটি মডেল প্রয়োগ করে দেখে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোনো ইউরোপীয় দেশের অন্যান্য বিষয় স্থির রেখে, বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেলে শীতকালে সাপ্তাহিক মৃত্যুর হার আনুমানিক তিন শতাংশ বেড়ে যায়। বিপরীতে, ওই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেলে শীতকালীন মৃত্যুহার ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
তবে, এখন ইউরোপে জ্বালানির দাম আগের থেকে অনেক বেশি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির ফলে ২০২০ সালের পরবর্তী সময়ের বিদ্যুৎখরচ ২০০০-১৯ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশিস হয়েছে। তাই অনেকের ধারণা, এবার জ্বালানিব্যয় ও শীতকালীন মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক অতীতের তুলনায় অনেক বেশি বাড়তে পারে।
ইতালির মতো দেশে ২০২০ সাল থেকে বিদ্যুতের খরচ প্রায় ২০০ শতাংশ বেড়েছে, যা মৌসুমি মৃত্যুর উচ্চঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, মৃত্যুহার বাড়ার আরেকটি প্রধান কারণ হতে পারে করোনা ভাইরাস। কারণ ঠান্ডা আবহাওয়ায় এ ভাইরাস অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যা অধিকাংশ বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে দুর্বল মানুষদের প্রাণহানী ঘটাতে সক্ষম।
অনেকের মতে এই শীতে ইউরোপে কতজন মানুষ মারা যেতে পারেন, তা একেবারে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে দ্য ইকোনমিস্টের গবেষণা অনুযায়ী, ২০০০-১৯ সালের মতো পরিস্থিতি যদি ২০২২-২৩ সালেও অব্যাহত থাকে, তাহলে রাশিয়ার ‘জেনারেল উইন্টার’ অত্যন্ত শক্তিশালী প্রমাণিত হবে।
এদিকে বিদ্যুতের দাম যদি বর্তমানে যা আছে তাই থাকে ও এ সংক্রান্ত গড় খরচ যদি ২০১৫-১৯ সালের খরচে ফিরে যায় তাহলেও এ শীতে এক লাখ ৪৭ হাজার মানুষ মারা যাবেন। যা গড় মৃত্যুর থেকে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
আবার বর্তমান পরিস্থিতি ইউরোপের সব দেশের শীতকালীন তাপমাত্রা যদি অনেক বেশিও হয়, তাহলে ৭৯ হাজার মানুষ মারা যাবেন, যা গড় মৃত্যুর তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। আবার যদি ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ইউরোপের তাপমাত্রার সর্বনিম্ম হয় তাহলে, এক লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ মানুষ মারা যাবেন, যা গড়ের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।
শীতকালীন মৃত্যুর ওপর জ্বালানিমূল্য বৃদ্ধির প্রভাবের মাত্রা দেশভেদে একেক রকম হতে পারে। যেমন, বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান খরচ ও বয়স্ক জনসংখ্যা বেশি থাকার কারণে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, এস্তোনিয়া ও ফিনল্যান্ডও মাথাপিছু হিসাবে খুব একটা অবস্থানে নেই। তবে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো যেসব দেশ জ্বালানির ওপর কার্যকরী মূল্যসীমা আরোপ করেছে, তারা বেশ ভালো অবস্থানে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এধরনের দেশে শীতকালীন মৃত্যুহার কম হতে পারে।
দ্য ইকোনমিস্টের হিসাব অনুযায়ী, স্পেনে মৃত্যুহার প্রায় সমতল থাকবে। অস্ট্রিয়ায় পরিমিত ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে বিদ্যুতের দাম সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা শীতকালীন মৃত্যুহার কমাতে বেশ সাহায্য করবে। দেশটিতে ঘণ্টায় প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতর দাম শুন্য দশমিক ১০ ইউরো করা হয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্টের মডেল অনুযায়ী, জ্বালানির দামবৃদ্ধি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উভয়পক্ষের যে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার সৈন্য মারা গেছেন, তার থেকেও বেশি মৃত্যু ঘটাবে। যদিও এখানে বয়সের একটি পার্থক্য থাকতে পারে। কারণ যুদ্ধে যারা মারা গেছেন, তারা অধিকাংশই যুবক। আর ঠান্ডায় যারা মারা যাবেন, তাদের বেশিরভাগই হবেন বয়স্ক নাগরিক।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অন্তত সাড়ে ছয় হাজার বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। ইউক্রেনীয় অবকাঠামোর ওপর রাশিয়ার আক্রমণ অব্যাহত থাকলে আসন্ন শীতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি অবশ্যই ইউক্রেনে ঘটবে।