শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রে হত্যার অভিযোগে প্রায় চার দশক জেল খাটার পর এক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারণ, নতুন ডিএনএ পরীক্ষায় থেকে দেখা গেছে, যে নমুনার ভিত্তিতে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেটি অন্য কারও। অর্থাৎ, হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে ভিন্ন এক ব্যক্তি।
১৯৮৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় রবার্টা উইডারমায়ারকে হত্যা এবং দুটি হত্যাপ্রচেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মরিস হেস্টিংসকে। এরপর টানা ৩৮ বছর বন্দিজীবন কাটাতে হয়েছে তাকে।
জানা যায়, উইডারমায়ারকে তার গাড়ির বুটের ভেতর মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। তার মাথায় একটি গুলির ক্ষত ছিল। হত্যার আগে তার ওপর যৌন নির্যাতনও চালানো হয়েছিল।
এরপর হেস্টিংসের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয় এবং সরকারি কৌঁসুলিরা আর্জিতে তার মৃত্যুদণ্ড চান। এ নিয়ে বিচারে প্রথম দফায় জুরিরা একমত হতে পারেননি। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় জুরিরা তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং ১৯৮৮ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও গ্রেফতার হওয়ার মুহূর্ত থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন হেস্টিংস।
ময়নাতদন্তের সময় ভিকটিমের মুখ থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় বীর্যের উপস্থিতি ধরা পড়েছিল। ২০০০ সালে ওই নমুনার ডিএনএ পরীক্ষার অনুরোধ খারিজ করে দেন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি।
অবশেষে ২০২১ সালে হেস্টিংস রাষ্ট্রপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন এবং জুন মাসে ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা যায়, নমুনায় সংগ্রহ করা বীর্য তার নয়।
নতুন ডিএনএ প্রমাণ এমন এক ব্যক্তির দিকে নির্দেশ করে, যিনি ২০২০ সালে কারাগারের মধ্যেই মারা গেছেন। ওই ব্যক্তি একটি সশস্ত্র অপহরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। সেখানেও তিনি তার নারী শিকারকে একটি গাড়ির ট্রাঙ্কে ভরে রেখেছিলেন।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জর্জ গ্যাসকোন হেস্টিংসের মামলাটিকে একটি ‘ভয়ংকর অবিচার’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বিচার ব্যবস্থা নিখুঁত নয়। যখন আমরা নতুন প্রমাণের বিষয়ে জানতে পারি, যার জন্য রায়ের প্রতি আমাদের আস্থা বিনষ্ট হয়ে যায়, তখন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া কর্তব্য।
মরিস হেস্টিংসের বয়স এখন ৬৯ বছর। সব অভিযোগ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর গত ২০ অক্টোবর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
হেস্টিংস সাংবাদিকদের বলেছেন, বিনাদোষে ৩৮ বছর আটক থাকা নিয়ে তার মধ্যে কোনো তিক্ততা নেই এবং বাকি জীবনটা তিনি উপভোগ করতে চান। তিনি বলেন, এই দিনটির জন্য আমি বহু বছর প্রার্থনা করেছি। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। আমি তিক্ত মানুষ নই। আমি এখন আমার জীবনকে উপভোগ করতে চাই।
সূত্র: বিবিসি বাংলা