শিরোনাম
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে হ্যালোউন উৎসব ট্রাজেডিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৪ জনে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে ১৪টি দেশের অন্তত ২৬ জন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫ বিদেশিসহ আরও ১৩২ জন। রোববার (৩০ অক্টোবর) দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
আহত বিদেশিদের মধ্যে বেশিরভাগই বাড়ি ফিরে গেছেন। ছয়জন এখনো চিকিৎসাধীন। নিহত বিদেশিরা চীন, ইরান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, নরওয়ে, কাজাখস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং অন্য দুটি দেশের নাগরিক।
কোরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভয়ংকর এই বিপর্যয়ে নিহত বিদেশিদের শোকাহত স্বজনদের সহায়তা দিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে; যেমন- দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সহায়তা করা প্রভৃতি।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে বর্ণাঢ্য হ্যালোইন উৎসবে যোগ দিতে সিউলের ইতাইওন শহরে জড়ো হয়েছিল প্রায় এক লাখ মানুষ।
করোনাভাইরাস মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর এটাই ছিল প্রথম হ্যালোউন। গত বছর কড়া বিধিনিষেধে এই উৎসব ঠিকভাবে পালন করতে পারেনি সিউলবাসী। তাই এবার উৎসাহের পাশাপাশি আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক।
কিন্তু স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে একটি সরু গলিতে ভিড় জমে গেলে কয়েকশ মানুষ আটকা পড়েন। সেখানে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে মারা যান অনেকে।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মাত্র কয়েকশ গজ দূরে থাকা মানুষেরা তখনো জানেন না, কী বিপর্যয় ঘটে গেছে শহরে। দুর্ঘটনাস্থলের পাশে তখনো ছিল উৎসবের আমেজ।
এক নারী স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কোরিয়া হেরাল্ডকে বলেন, পুলিশ না আসা পর্যন্ত বুঝতেও পারিনি কী ঘটছে। আমি রাস্তার ঠিক উল্টো পাশে ছিলাম। পুলিশ আমাদের চলে যেতে বলার পর কী ঘটেছে তা জানতে পারি।
তাছাড়া হ্যালোইনের পোশাকের কারণেও মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা আসল নাকি নকল তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন অনেকে।
সুয়াহ চো নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী নারী সিএনএন’কে বলেন, মানুষ ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছিল। প্রচুর চিৎকার হচ্ছিল। এক পুলিশ কর্মকর্তাও চিৎকার করছিলেন। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম না তিনি আসল কি না। কারণ বহু মানুষ কস্টিউম পরে ছিল।
এ ট্রাজেডিতে ভুক্তভোগী অনেকের মরদেহ তাৎক্ষণিকভাবে পার্শ্ববর্তী একটি জিমে রাখা হয়। জায়গাটিকে অস্থায়ী মর্গ হিসেবে ব্যবহার করেছে পুলিশ। সেসময় ফরেনসিক কর্মকর্তারা নিহতদের পরিচয় উদ্ধারে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।
এ দুর্ঘটনায় শুধু আহত-নিহতই নয়, নিখোঁজও হয়েছেন বহু মানুষ। আইভরি কোস্ট থেকে যাওয়া এক প্রবাসী জানান, তার ছেলে এখনো বাড়ি ফেরেনি। তিনি বলেন, গত রাতে আমি আমার ২২ বছর বয়সী ছেলে অ্যাবি মাসেলার সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছি। সে মৃতদের তালিকায় নেই। সে নিখোঁজ।
কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, স্থানীয় সময় রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৪ হাজার ২৪ জন নিখোঁজ থাকার খবর পাওয়া গেছে।
এ ট্রাজেডিতে সপ্তাহব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে দক্ষিণ কোরীয় সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নির্দেশক্রমে আগামী ৫ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত জাতীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সময়ের মধ্যে সব সরকারি অফিস ও বিদেশি মিশনে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং অপ্রয়োজনীয় অনুষ্ঠানগুলো বাতিল বা স্থগিত হবে।