শিরোনাম
২০০০ থেকে ২০০৪ ও ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রচণ্ড দাবদাহে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মৃত্যু ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। আর গত দুই দশকে গরম–সংক্রান্ত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ বেড়েছে। চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের এক নতুন গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এ গবেষণায় ১০৩টি দেশের তথ্য খতিয়ে দেখা হয়েছে। খবর এনডিটিভি ও বিবিসি
ল্যানসেটের নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে চরম আবহাওয়া প্রতিটি মহাদেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে প্রতিটি দেশ করোনা মহামারির প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, পশ্চিম ইউরোপ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ সুদানে বন্যার কারণে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং কোটি কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন সুস্বাস্থ্যের প্রতিটি স্তম্ভকে ক্রমশ দুর্বল করছে এবং বর্তমান করোনা মহামারি ও ভূরাজনৈতিক সংঘাত স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবকে আরও জটিল করে তুলছে। দাবদাহের কারণে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বাড়ছে, মানসিকস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে, কাজ ও ব্যায়াম করার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচণ্ড তাপমাত্রায় দুর্ভোগ পোহানো মানুষের স্বাস্থ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি হৃদ্রোগ ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার মতো নানা রোগের কারণ হয়। হিটস্ট্রোক, প্রতিকূল গর্ভাবস্থা, ঘুমের সময়ের ক্ষতি এবং দুর্বল মানসিকস্বাস্থ্য ও আঘাতজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
দ্রুত ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরের তুলনায় ২০২১ সালে ৩৭০ কোটি বেশি বয়স্ক এবং এক বছরের কম বয়সী মানুষ দাবদাহে দুর্ভোগ পোহায়। চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ায় তাপপ্রবাহ নিয়ে ল্যানসেটের এই গবেষণায় বলা হয়, মার্চ ও এপ্রিলে ভারত ও পাকিস্তানে অন্য সময়ের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। জলবায়ু পরবর্তনের কারণেই এমনটা হয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, পরিবর্তিত জলবায়ু সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যনিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ১৯৮১-২০১০ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৯ কোটি ৮০ লাখ বেশি মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী চরম খরায় আক্রান্ত এলাকার পরিমাণ এক–তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কয়েক মিলিয়ন মানুষকে পানি নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে ফেলেছে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গ্রান্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং কাউন্টডাউনে প্রধান প্রদায়ক এলিজাবেথ রবিনসন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই অপুষ্টি, খাদ্যঘাটতিসহ খাদ্যনিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, বিশ্বকে কার্বনশূন্য করতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করতে সরকারগুলোর ‘গভীর ব্যর্থতা’র ফল জলবায়ু ও স্বাস্থ্যগত সংকটময় পরিস্থিতি।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচণ্ড তাপমাত্রার মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি মানুষের স্বাস্থ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি হৃদ্রোগ ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার মতো নানা জটিলতা ঘটায়। হিটস্ট্রোক, প্রতিকূল গর্ভাবস্থা, ঘুমের সময়ের ক্ষতি এবং দুর্বল মানসিকস্বাস্থ্য ও আঘাতজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
২০০০ থেকে ২০০৪ ও ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রচণ্ড দাবদাহে ভারতে ৫৫ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে। আর গত বছর একই কারণে দেশটিতে ১৬৭ দশমিক ২ বিলিয়ন শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। ফলে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা দেশের জিডিপির প্রায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশের সমান।