শিরোনাম
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের আট মাস পেরিয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের অনেক জায়গায় রুশ বাহিনী তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, অনেক জায়গায় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পর্যাপ্ত না থাকায় প্রতিরোধ গড়তে পারেনি রুশ সেনারা। অনেক জায়গায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর হামলার মুখে অস্ত্র-সরঞ্জাম খুইয়েছে তারা। এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধের গতি ধরে রাখতে অস্ত্র-সরঞ্জামের উৎপাদন বাড়ানো ও তা দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনাদের হাতে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খবর বিবিসি ও আল-জাজিরার
অস্ত্র ও সরঞ্জাম উৎপাদন বাড়ানো এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনাদের হাতে সেসব পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছেন পুতিন। গতকাল মঙ্গলবার সেই কমিটির বৈঠক ছিল। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পুতিন নিজেই।
বৈঠকে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্র-সরঞ্জামের ঘাটতির বিষয়টি বিভিন্ন সময় এত বেশি উচ্চারিত হয়েছে যে সমস্যার সমাধানে পুতিনকে একটি কাঠামো তৈরি করতে হয়েছে। তা ছাড়া পুতিন এ সময় ইউক্রেনের সব এলাকায় যুদ্ধের গতি বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
ইউক্রেনে তিন লাখ সেনা নিযুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। রুশ সংবাদমাধ্যমের খবর, এসব সেনার অনেকেই এখনো প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাননি। এমনকি তাঁদের এখনো চিকিৎসাসামগ্রী ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট দেওয়া হয়নি। অনেকে নিজ উদ্যোগে এসব সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছেন। সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিতে অনেকেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পাননি।
প্রেসিডেন্ট পুতিন গত সপ্তাহে রুশ সেনাদের একটি প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শন করেন। সেই সময় এই ঘাটতির বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করা হয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই। পরিদর্শনকালে পুতিন সেসব রুশ সেনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যাঁদের পর্যাপ্ত অস্ত্র–সরঞ্জাম রয়েছে।
তবে ঘাটতির বিষয়টি উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার গোলাবারুদের সরবরাহ কমে এসেছে। এদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, ‘রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মজুতও কমতির দিকে। তাই যুদ্ধে এসব অস্ত্রের ব্যবহার অনেকটা কমিয়েছে মস্কো। কিংবা রাশিয়া কৌশলগত সামরিক লক্ষ্য বদলে ফেলছে।’
তবে এত কিছুর পরও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের এক–তৃতীয়াংশের বেশি জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়া। গতকাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ তথ্য জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে যুদ্ধে ইউক্রেনের অবকাঠামোগত ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে।
মহড়া দেখলেন পুতিন
ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দায়িত্বে থাকা বাহিনীর বার্ষিক মহড়া পর্যবেক্ষণ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। রুশ প্রতিরক্ষা দপ্তর ক্রেমলিন আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার ইন চিফ ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বের আওতায় স্থল, নৌ ও আকাশপথে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দায়িত্বে থাকা বাহিনীগুলোর মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহড়ায় ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। আর্কটিক অঞ্চলে এ মহড়া চলছে।
রাশিয়া থেকে সরাসরি মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত একটি ছবিতে নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে বড় পর্দায় সরাসরি মহড়া পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায় পুতিনকে।
খেরসনে বড় যুদ্ধের শঙ্কা
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের খেরসনে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া—এমন আশঙ্কার করছে ইউক্রেন সরকার। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ওলেস্কি আরেস্টোভিচ আজ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘খেরসনে নিজেদের অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী করছে রাশিয়া। এর অর্থ হলো সেখানে ব্যাপক যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে খেরসনে দুই পক্ষের তুমুল লড়াই চলছে। এর জেরে স্থানীয় বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে রাশিয়া।
জাতিসংঘে মস্কোর অভিযোগ
যুদ্ধে ইউক্রেন ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহার করতে পারে বলে আগে থেকেই দাবি করে আসছে রাশিয়া। এবার এই বিষয়টি অভিযোগ আকারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছে দেশটি।
আজ জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার উপরাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পোলয়ানস্কি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডার্টি বোমার ঝুঁকির বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদকে জানাতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট।’
তবে মস্কোর এমন দাবি নাকচ করেছে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। তাদের দাবি, ইউক্রেন নয়, বরং রাশিয়া ডার্টি বোমা ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে।