শিরোনাম
রাশিয়ান সেনারা উত্তরপূর্ব ইউক্রেনে তাদের মূল ঘাঁটি ইজিয়ুম ছেড়ে দেওয়ার পর কয়েকদিনেই যুদ্ধ পরিস্থিতির মোড় ঘুরে গেছে। রাশিয়ার কাছ থেকে উত্তরপূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেন।
এমন অবস্থায় পুনরুদ্ধারকৃত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ জোরদারের লক্ষ্যে অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করার জন্য পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
শনিবার রাশিয়া তাদের উত্তরপূর্ব ইউক্রেনের মূল ঘাঁটি ইজিয়ুম ছেড়ে দেওয়ার পর কয়েকদিনেই যুদ্ধ পরিস্থিতির মোড় পাল্টে ইউক্রেইন ওই এলাকার ডজনের বেশি শহরের দখলে নিয়ে নিয়েছে। ইজিয়ুমের পতনকে যুদ্ধের শুরুর দিকে রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে আসার পর রুশ বাহিনীর সবচেয়ে বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন এক সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, রাশিয়া উত্তরপূর্ব খারকিভের অনেক এলাকা ছেড়ে দিয়েছে এবং অনেক সেনাকে সীমান্ত দিয়ে ফিরিয়ে নিয়েছে। এর মানে হচ্ছে, রাশিয়া সম্ভবত তাদের উত্তরপূর্বের অভিযান যে রেলওয়ে লাইনের ওপর ভিত্তি করে অব্যাহত ছিল, সেটি পরিত্যাগ করছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ওয়াশিংটন ও এর মিত্ররা ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিয়েছে, যা রাশিয়ার অগ্রগতি থমকে দিতে সহায়তা করেছে বলে কিয়েভ নিজেও স্বীকার করেছে।
সোমবার রাতে দেওয়া এক ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়ার সন্ত্রাসকে পরাজিত করতে’ ইউক্রেইন ও পশ্চিমাদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা দরকার। সবার আগে দরকার, দ্রুত গতিতে বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা পাঠানো’।
ওয়াশিংটন কয়েকদিন আগেই ইউক্রেনকে হিমারস রকেটবিধ্বংসী ব্যবস্থাপনার গোলাসহ তাদের সর্বশেষ অস্ত্র সহায়তা প্যাকেজে কী কী দেওয়া হচ্ছে, তার ঘোষণা দিয়েছিল। এর আগে তারা ইউক্রেনকে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য নাসামস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনাও দিয়েছিল, যা গুলি করে বিমান ভূপাতিত করতে সক্ষম।
জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন এরই মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে মোটামুটি ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গার দখল ফেরত নিয়েছে। ইউক্রেনের আয়তন ৬ লাখ বর্গকিলোমিটারের কাছাকাছি, সেই হিসাবে ইউক্রেইনের ফেরত নেওয়া অংশ মোট আয়তনের একশ ভাগের একভাগ। যে অংশ তারা পুনর্দখল করেছে, তা একত্রে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজার সমপরিমাণ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেইনে সেনা অভিযান শুরুর পর এক পর্যায়ে দেশটির মোট ভূখণ্ডের এক পঞ্চমাংশের মতো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। এখনও খারকিভ বাদে বাকি অংশটুকু তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
এপ্রিলে তারা কিয়েভের উপকণ্ঠ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিল, তারপর এখন পর্যন্ত রুশ বাহিনীর সবচেয়ে বড় পরাজয় খারকিভে; অথচ এরপরও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।
সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক প্রতিবেদকের প্রশ্নের পাশ-কাটানো জবাবে বলেছেন, সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের ওপর পুতিনের এখনও আস্থা আছে। বিশেষ সামরিক অভিযান চলবে। শুরুতে যেসব লক্ষ্য ঠিক হয়েছিল, তা অর্জন না করা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।
খারকিভে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকদিন চুপ থাকার পর শনিবার জানায়, তারা তাদের উত্তরপূর্বের মূল ঘাঁটি ইজিয়ুম ও পার্শ্ববর্তী বালাকলিয়া ছেড়ে দিয়েছে। একে পূর্বপরিকল্পিত ‘সেনা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া’ বলেও অভিহিত করে তারা।